vcBux

Tuesday 12 April 2011


স্টাফ রিপোর্টার
সংগঠন শক্তিশালী ও জনগণের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আন্দোলন জোরদার করতে শিগগিরই সারাদেশে সাংগঠনিক সফর শুরু করবে বিএনপি। আগামী ২৩ এপ্রিল ঢাকায় দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর থেকে শুরু হবে এ সফর। এ সফরের জন্য দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পরামর্শে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে এরই মধ্যে ১৯টি টিম গঠন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আমরা প্রতিটি জেলায় সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দলকে আরও শক্তিশালী করতে চাই। এ কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। দলকে সংগঠিত করার জন্য আমাদের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নির্দেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে সারাদেশে সাংগঠনিক সফরের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই এ সফর শুরু হবে। সবকিছু চূড়ান্ত হলে তা জানানো হবে।
৬ এপ্রিল বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে ৫ দিনের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এতে রয়েছে : ১৮ এপ্রিল গ্যাস সঙ্কট, ২৪ এপ্রিল বিদ্যুত্ সঙ্কট সমাধান, ২৬ এপ্রিল দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ৫ মে শেয়ার কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে ঢাকাসহ সব বিভাগ ও জেলা সদরে সমাবেশ, মিছিল এবং স্মারকলিপি পেশ করা হবে। ৯ মে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও মহান মে দিবস উপলক্ষে আগামী ২ মে ঢাকায় শ্রমিক দলের কাউন্সিলে খালেদা জিয়া বক্তৃতা করবেন।
২৩ এপ্রিল ঢাকায় জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে।
অবশ্য গ্যাস-পানি-বিদ্যুত্ সঙ্কট, শেয়ারবাজার, ভারতের সঙ্গে ঋণসহ বিভিন্ন অসম চুক্তি, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনে দলীয়করণ, রাজনৈতিক মামলা একতরফা প্রত্যাহার, উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ বাবু হত্যাকাণ্ডসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে আসছে দলটি।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, এখন জেলা-উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন, তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের ব্যর্থতা ও জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড তুলে ধরে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন গড়ে তোলার জন্যই সারাদেশ সফরের নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
জানতে চাইলে যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান জানান, এরই মধ্যে ১৯টি টিম গঠন করা হয়েছে। আজ-কালের মধ্যে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেই সফরের সময়ক্ষণ নির্ধারণ করা হবে। সারাদেশ সফরের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে এসব টিম গঠন করা হয়েছে। চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাকে এসব টিমে অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছে। আজ-কালের মধ্যে দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফরের জন্য গঠিত এসব টিমের সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হবে।
অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম জানান, ২৩ এপ্রিল জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক শেষে সাংগঠনিক সফর শুরু হতে পারে।

মানবাধিকার লংঘনকারী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ


মানবাধিকার লংঘনকারী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ

বশীর আহমেদ
মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্ট প্রকাশের পর এখন বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা হচ্ছে। মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্টে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, রিমান্ডের নামে নির্যাতন, বিচার বিভাগ দলীয়করণ ও ন্যায়বিচার না পাওয়া, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, রাজনৈতিক সহিংসতা, সীমান্তে হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিস্তারিত বিবরণ উদাহরণসহ তুলে ধরা হয়েছে। তবে মার্কিন এই রিপোর্ট সম্পর্কে বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্টটি হতাশাজনক। বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও কলামিস্ট বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, বাংলাদেশ এখন মানবাধিকার হত্যাকারী রাষ্ট্র। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, যাদের দায়িত্ব মানবাধিকার রক্ষা করা তারা এখন ইচ্ছেমত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান মিঞা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বাংলাদেশে এখন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
উল্লেখ্য, মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বলা হয় :
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েই চলেছে। আটক অবস্থায় মৃত্যু, নির্যাতন, অযৌক্তিকভাবে গ্রেফতার এবং ডিটেনশনের জন্য এই নিরাপত্তা বাহিনী দায়ী। বিচারবহির্ভূত এসব হত্যা এবং বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত র্যাবের ব্যাপারে সব ধরনের তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এটা গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্য এ ধরনের অপরাধ করছে এই নিশ্চয়তা নিয়ে যে, তাদের কোনো শাস্তি হবে না। এতে বিচারের আগেই কারাগারে মৃত্যুঝুঁকির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কর্তৃপক্ষ নাগরিক অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। বিচার বিভাগকে অব্যাহতভাবে রাজনীতিকীকরণ করায় বিচারব্যবস্থায় বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। এর ফলে বিশেষ করে বিরোধী দলের জন্য এখন ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ
সীমিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার গণমাধ্যম এবং জনগণের বাকস্বাধীনতাকে সীমিত করে ফেলেছে। গণমাধ্যমগুলো সেলফ সেন্সরশিপ করতে বাধ্য হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত হয়রানি করছে সাংবাদিকদের। সরকার সভা-সমাবেশের অধিকারকে সীমিত করেছে এবং অব্যাহত রয়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা। এটা এখন একটি বড় সমস্যা।
সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি অব্যাহত গতিতে চলছে এবং দুর্নীতির সঙ্গে যারা যুক্ত, তারা শাস্তির বাইরে থেকে যাচ্ছে। নারীর প্রতি বৈষম্য এবং নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা একটি ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে বাংলাদেশে। নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হচ্ছে নারীরা। মানব পাচার এখনও বড় সমস্যা।
মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্ট সম্পর্কে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান আমার দেশকে বলেন, যেনতেনভাবে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এখানে অনেক পুরনো তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্টে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। উদাহরণসহ এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এখানে নতুন কিছু নেই। বিষয়গুলো আমাদের জানা।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব ঘটনা বন্ধে কমিশন এখন কী পদক্ষেপ নেবে—এ প্রশ্নের জবাবে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ করতে আমরা যে কৌশল প্রণয়ন করছি সেখানে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া হবে।
বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, কলামিস্ট ও রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর মার্কিন রিপোর্ট ও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার দেশকে বলেন, মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্টে যেসব তথ্য এসেছে, তার সত্যতা আছে। তবে তাদের এই রিপোর্ট নিয়ে আমাদের হৈচৈ করার কিছু নেই। আমরাই ভালো জানি আমাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে। আমরাই এর ভুক্তভোগী। মার্কিন রিপোর্টে যেসব বিষয় এসেছে, সেসব ব্যাপারে আমরা বলে বলে হয়রান হয়ে গেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন মানবাধিকার রিপোর্ট দিচ্ছে; কিন্তু তাদের সমর্থন নিয়েই তো সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। তিনি বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সর্বোচ্চ পর্যায়। এর বাইরে আরও ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। কথায় কথায় গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন। আপনার সম্পাদককেও তো বারবার রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে। বিচারকরাও এখন রিমান্ডের অনুমতি দিয়ে দেন। তিনি আরও বলেন, এখন সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হয় না। হরতাল করতে বাধা দেয়া হয়। হরতাল ভালো না খারাপ তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে; কিন্তু হরতাল একটি গণতান্ত্রিক অধিকার।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার দেশকে বলেন, মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্টে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে, তার সবই ঠিক। এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তো আমরা এখন পত্রিকার পাতায় প্রতিনিয়ত দেখতে পাই। বিচারবহির্ভূত হত্যা এখন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। এখানে যার যা খুশি তা-ই করছে। সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে আমার মনে হয় না। বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, যাদের হাতে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব তাদের হাতেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। কোনো সভ্য সমাজে এটা চলতে পারে না। মানবাধিকার রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার যদি পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। মানবাধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা ইতিবাচক। বিরোধী দলের উচিত সংসদে মানবাধিকার ইস্যুতে সোচ্চার হওয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী প্রফেসর ড. মনিরুজ্জামান মিঞা তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্টে তারই প্রতিফলন হয়েছে। আমি মনে করি, মার্কিন এই রিপোর্টটি তথ্যভিত্তিক। বিচারবহির্ভূত হত্যা, ন্যায়বিচার না পাওয়া, দুর্নীতি, রাজনৈতিক সহিংসতাসহ যেসব বিষয় রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে তা সঠিক। তিনি বলেন, এখন সরকার যদি বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার রক্ষায় সচেষ্ট হয় তাহলেই কেবল পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে।

wel come nrbux

NRBUX