vcBux

Tuesday, 29 March 2011

শোয়েবকে সেমিফাইনালে খেলানোর পক্ষে আকরাম

স্পোর্টস ডেস্ক
চলতি বিশ্বকাপের পর একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর দেখা যাবে না পাকিস্তানের গতি তারকা শোয়েব আখতারকে। ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন তিনি। এ কথা ক’দিন আগেই জানিয়ে দিয়েছেন শোয়েব। এখন ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলার অপেক্ষায় আছেন। গ্রুপপর্বে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার পর আর কোনো ম্যাচেই মাঠে নামেননি রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস শোয়েব আখতার। তাকে ছাড়াই কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দশ উইকেটে বিধ্বস্ত করে সেমি নিশ্চিত করে আফ্রিদিবাহিনী। তাই ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে শোয়েবের মাঠে নামা, না নামা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশার। অনেকেই মনে করছেন, শোয়েবকে ছাড়াই ভারতের মাটিতে মাঠে নামতে পারে পাকিস্তান। তবে সেমিফাইনালে স্বাগতিকদের বিপক্ষে এই গতি জাদুকরকে মাঠে নামানোর পক্ষে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম। তার মতে, ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের মহারণে শোয়েবই গতির জাদু দিয়ে পাকিস্তানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। এছাড়া পাকিস্তানের বোলিং সাইডকে আরও শক্তিশালী করতে শোয়েব ছাড়া বিকল্প কেউ নেই।
পাকিস্তানি সাবেক এ গ্রেট মনে করেন, ভারতের বিপক্ষে শোয়েবকে খেলানো উচিত। ও নিজের সেরাটা মেলে ধরতে পারবে। তার জায়গায় ওয়াহাব রিয়াজ ভালো বোলিং করছে। কিন্তু ও দলকে সেরাটা উপহার দিতে পারছে না। তবে শোয়েবের একটাই সমস্যা। তা হলো ও দ্বিতীয় স্পেলে গিয়েই লাইনচ্যুত হয়ে যায়। তবে আমি বিশ্বকাপের ওয়ার্মআপ ম্যাচের আগে ওকে কৌশল শিখিয়ে দিয়েছি। আশা করি ওই কৌশলটা ও ভালোই কাজে লাগাতে পারবে।’ শচীনকে নিয়ে পাকিস্তানের ভয়। কারণ, এই লিটল মাস্টার ওয়ানডে ও টেস্ট মিলে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করতে আর মাত্র এক ধাপ পিছিয়ে আছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শচীন সেঞ্চুরি দিকেই এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু ৫৩ রানে শন টেইটের বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাজঘরে ফিরলেও তিনি সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করবেন বলে বিশ্বাস শচীন ভক্তদের। তবে ওয়াসিম আকরাম মনে করছেন, শচীনের কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরিটি করার পথে শক্ত বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবেন কেবল শোয়েব আখতারই। তিনি বলেন, ‘ভারতের বিপক্ষে শোয়েব সবসময় বিপজ্জনক। ওর অতিরিক্ত সাহসী বোলিং পাকিস্তানের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। শচীন ও শেবাগের মতো বিশ্বমানের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থ করতে শোয়েবই যোগ্য বোলার। আশা করি ও সেমিফাইনালের মহারণে ভালো খেলবে।’ ওয়েস্টইন্ডিজ বিপক্ষে সাঈদ আজমল ভালো বোলিং করেছিলেন। তবে তার জায়গায় খেলেছেন আবদুর রেহমান। তাই ওয়াসিম আকরাম মনে করেন, পাকিস্তানের বর্তমান একাদশ নিয়ে ভালো ফর্মে থাকলেও মোহালির মতো উইকেটে শোয়েবকে প্রয়োজন। ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকে পাকিস্তান এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে ভারতের মুখোমুখি হয়েছে চারবার। চারটি ম্যাচেই পাকিস্তান হেরেছে। আকরামের মতে, আগের ম্যাচগুলোর চেয়ে এ বিশ্বকাপেই সবচেয়ে শক্তিশালী লড়াই হবে দু’দলের মধ্যে। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারত ফেবারিট দল। তবে পাকিস্তান দারুণ খেলছে। লিখিতভাবে বলা যায়, দু’দলেরই অভিজ্ঞতা অনেক। পাকিস্তানের বোলিং সাইড খুবই বিধ্বংসী। বৈচিত্র্যময় বোলিং করতে শহীদ আফ্রিদিদের জুড়ি নেই।’ ভারত সব সময়ই পাকিস্তানের বিপক্ষে চাপ নিয়ে খেলে। তাই বিশ্বকাপের এই সেরা মঞ্চে আরও বাড়তি চাপ নিয়ে জয় পেতেই নামবে ধোনি বাহিনী। তবে পাকিস্তানও জয়ের অঙ্ক কষছে। দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে শহীদ আফ্রিদির দলও চাপ নিয়েই মাঠে নামবে।

ইসলাম রক্ষায় গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আহকামে শরিআহ হেফাজত কমিটি আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার নামে দেশকে ধর্মহীন রাষ্ট্র বানাতে চায়। তারা কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন না করার ওয়াদা করে ক্ষমতায় এসে একের পর ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। পর্দাবিরোধী প্রজ্ঞাপন, ইসলামী শিক্ষাবিরোধী জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন, ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান চালু, ফতোয়া নিষিদ্ধের উদ্যোগের পর কোরআনবিরোধী নারীনীতি প্রণয়ন করেছে সরকার। সুতরাং দেশে ইসলাম রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীনের সভাপতিত্বে ‘ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি, ফতোয়া নিয়ে ষড়যন্ত্র ও কোরআনবিরোধী নারীনীতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনা করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সোবহান, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, আইম্মাহ পরিষদের সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, খেলাফত আন্দোলনের নেতা মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদী, এনডিপির চেয়ারম্যান আলমগীর মজুমদার, শরিআহ হেফাজত কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক ড. মুফতি আবু ইউসুফ, মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আবদুছ ছবুর মাতুব্বর, মাওলানা রুহুল আমীন মাদানী, ড. মাওলানা খলিলুর রহমান, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা আবদুল মোমেন নাসেরী, মুফতি মাওলানা আবদুল কাইউম, ড. মাওলানা আবদুস সামাদ, মাওলানা আবু দাউদ যাকারিয়া, মাওলানা আবু হানিফ নেসারী, মো. রফিকুল ইসলাম, মাওলানা ফাহিম সিদ্দিকী প্রমুখ।
বক্তারা আরও বলেন, নামাজ যেভাবে পড়তে হবে, অযু কীভাবে করতে—এসব প্রশ্নের উত্তরে কোরআনের বক্তব্য তুলে ধরাই ফতোয়া। সুতরাং ফতোয়া নিষিদ্ধ করার অর্থ কোরআনের সিদ্ধান্ত নিষিদ্ধ করা। এই সিদ্ধান্ত কোনো মুসলমান মেনে নিতে পারে না। তারা বলেন, প্রস্তাবিত নারীনীতিতে পুরুষ-মহিলা সমান অধিকারের বিধান রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আইন পাস হওয়ার পর যদি কোনো মহিলা পৈতৃক সম্পত্তিতে সমান অধিকার দাবি করে আদালতের শরণাপন্ন হয় তবে তার পক্ষে রায় হবে। যা কোরআনের সুস্পষ্ট বিরোধী।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ‘ওলামারা নারীনীতি পড়ে নাই’ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ওলামা নেতারা বলেন, আপনার এই বক্তব্য আলেমদের সঙ্গে বেয়াদবির শামিল। আসলে প্রধানমন্ত্রী নিজেই নারীনীতি পড়েননি। তারা প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উদ্দেশে বলেন, যেভাবে ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য একাধিক ফ্রন্ট খুলেছেন তাতে আমাদের মনে হয় আপনাদের সঙ্গে এদেশের মুসলামানদের সংঘাত অনিবার্য। সুতরাং খুব তাড়াতাড়ি আপনাদের বোধোদয় হওয়া উচিত এবং সব ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। অন্যথায় এ আইন প্রণয়নই আপনাদের ক্ষমতা থেকে পদত্যাগের জন্য যথেষ্ট হবে। জাতি আজ তাদের ঈমান রক্ষার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই কোরআনবিরোধী সব ষড়যন্ত্র রুখে দেয়া হবে।

সাঈদীর কর ফাঁকির অভিযোগ গঠনের শুনানি ২৫ এপ্রিল


সাঈদীর কর ফাঁকির অভিযোগ গঠনের শুনানি ২৫ এপ্রিল

আদালত প্রতিবেদক | তারিখ: ২৯-০৩-২০১১
নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী

জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে কর ফাঁকির মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি হবে আগামী ২৫ এপ্রিল। আজ মঙ্গলবার এ মামলায় অভিযোগ গঠন-বিষয়ক শুনানির দিন ধার্য ছিল।
সাঈদীর আইনজীবী আজ সময়ের জন্য আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক মোজাম্মেল হোসেন এ তারিখ ধার্য করেন।
আজ সাঈদীকে আদালতে নেওয়া হয়। আসামি পক্ষের আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক আদালতকে বলেন, মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করা হলে আদালত চার সপ্তাহের রুল জারি করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন—এ ধরনের কোনো আদেশ দেননি। আসামি পক্ষের আদালতে দাখিল করা হাইকোর্টের আদেশে এ ধরনের কোনো বিষয় উল্লেখ নেই। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য প্রস্তুত। আসামিকে সময় দেওয়ার কোনো কারণ নেই।
আসামি পক্ষের আইনজীবীরা পৃথক আরেকটি দরখাস্ত দিয়ে সময় চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৭ আগস্ট কর ফাঁকির অভিযোগে সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

Saturday, 26 March 2011

সাংবাদিক পথচারীসহ শতাধিক আহত : ১৭ কর্মী আটক : শিবিরের স্বাধীনতা শোভাযাত্রায় গুলি টিয়ারশেল লাঠিচার্জ

সাংবাদিক পথচারীসহ শতাধিক আহত : ১৭ কর্মী আটক : শিবিরের স্বাধীনতা শোভাযাত্রায় গুলি টিয়ারশেল লাঠিচার্জ

স্টাফ রিপোর্টার
গতকাল রাজধানীতে ছাত্রশিবিরের স্বাধীনতা দিবসের শোভাযাত্রায় অতর্কিত হামলা চালায় পুলিশ। শিবির কর্মীদের ওপর পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও শটগানের গুলিতে কাকরাইল-শান্তিনগর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় সাংবাদিক, পথচারীসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে ১৭ জনকে আটক করে পুলিশ। ন্যক্কারজনক এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিবির নেতারা। স্বাধীনতা দিবসের শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানে এ ধরনের হামলাকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চরম অসম্মান বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক। তিনি অবিলম্বে এ হামলার বিচার ও আটককৃতদের মুক্তি দাবি করেন।
জানা গেছে, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল সকালে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এ উপলক্ষে সকাল ৯টায় শিবির কর্মীরা কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড়ে জড়ো হতে থাকলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু শিবিরের কয়েক হাজার নেতাকর্মী এ সময় মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে এবং বড় পতাকা ও ব্যানার নিয়ে শোভাযাত্রা বের করে। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিকের বক্তব্য শেষ হওয়ার মুহূর্তে পেছন দিক থেকে হঠাত্ হামলা শুরু করে পুলিশ।
শিবির কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও শটগানের গুলি নিক্ষেপ এবং বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে। এ সময় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আতঙ্কিত শিবির কর্মী ও পথচারীরা প্রাণরক্ষায় ছোটাছুটি শুরু করে। অনেকে বিভিন্ন দোকানে আশ্রয় নেয়। কিন্তু পুলিশ সেখানে ঢুকেও তাদের লাঠিপেটা করে। পুলিশের হামলা থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিক ও পথচারীরা। এ সময় পুলিশের হামলায় দিগন্ত টিভির এক সাংবাদিকসহ শতাধিক শিবিরকর্মী আহত হয়। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ আহত ১৭ শিবির কর্মীকে অমানবিকভাবে আটক করে রমনা থানায় নিয়ে যায়। আটককৃতরা হলো আবু জায়েদ (১৮), রুহুল আমিন (২২), জাভেদ ইকবাল (২৪), শরিফুল ইসলাম (২০), মোহাম্মদ বাপ্পী (১৫), মাশরুল আহমেদ (২১), রবিউল ইসলাম (২১), আশিকুর রহমান (২২), হাফিজুর রহমান (১৮), হেলালউদ্দিন (২২), মমিনুল করিম (১৫), দেলোয়ার হোসেন (২১), সানোয়ার হোসেন তারেক (২১), আলী হোসেন (২৩), মুজাহিদুল ইসলাম (১৭), রকিব (২১) ও রফিকুল ইসলাম (১৮)। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হয়েছে। শিবির সন্দেহে এ সময় কয়েকজন হিন্দুকে আটক করা হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে রমনা থানার ওসি শিবলী নোমান সাংবাদিকদের জানান, সকাল ৯টার দিকে শিবির কর্মীরা জেলে আটক তাদের নেতা নিজামী, মুজাহিদসহ অন্যদের মুক্তির দাবিতে শান্তিনগর এলাকায় মিছিল বের করে। পুলিশ বাধা দিলে তারা গাড়ি ভাংচুর এবং কাজে বাধা দেয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ১৭ শিবির কর্মীকে আটক করে পুলিশ। তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে বেআইনি মিছিল করা, ভাংচুর, পুলিশের কাজে বাধা এবং আহত করার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। তাদেরকে দ্রুত বিচার আইনে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
শিবিরের নিন্দা ও প্রতিবাদ : স্বাধীনতা দিবসের শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা পরবর্তী সমাবেশে পুলিশের হামলা ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিবির নেতারা। এক যৌথ বিবৃতিতে শিবির সভাপতি ডা. মো. ফখরুদ্দিন মানিক ও সেক্রেটারি জেনারেল মো. দেলাওয়ার হোসেন বলেন, মহান স্বাধীনতা জাতির অহঙ্কার। স্বাধীনতা দিবসে দেশের প্রতিনিধিত্বশীল ছাত্র সংগঠন হিসেবেই শিবির বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রা পরবর্তী সমাবেশে কোনো উস্কানি ছাড়াই পুলিশের ন্যক্কারজনক হামলা ও গ্রেফতারে আমরা হতবাক। পুলিশের এ হামলার মধ্য দিয়ে সরকারের পৈশাচিক রাজনৈতিক প্রতিহিংসা প্রকাশ হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে হামলাকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসম্মান বলে তারা মন্তব্য করেন। তারা অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। শিবির নেতারা ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে আহত সাংবাদিক ও শিবির নেতাকর্মীদের দেখতে যান।
এদিকে শান্তিনগর মোড়ে শোভাযাত্রা পরবর্তী সমাবেশে শিবির সভাপতি ডা. মো. ফখরুদ্দিন মানিক বলেন, ছাত্রশিবির দেশপ্রেমিক ছাত্র সংগঠন। শিবির প্রতিনিয়ত ছাত্রসমাজকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করছে। স্বনির্ভর দেশ গড়তে স্বাধীনতার চেতনায় ছাত্র-জনতার ঐক্য তৈরিতে কাজ করছে এ সংগঠন। তিনি বলেন, ছাত্রশিবির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শিবির ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। আওয়ামী সরকারের দেশবিরোধী অপকৌশল রুখতে শিবির প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাবে।
শোভাযাত্রায় অংশ নেন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ড. মু. রেজাউল করিম, সেক্রেটারি জেনারেল মো. দেলাওয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা আতাউর রহমান সরকার, আবদুল জব্বার, সোহেল খান, নিজামুল হক নাঈম, আতিকুর রহমান, তারেকুজ্জামান, আবু সালেহ মো. ইয়াহইয়া, মাকসুদুর রহমান, মাসুদ পারভেজ রাসেল, নূরুল ইসলাম আকন্দ, আল মুত্তাকী বিল্লাহ, মাসুদুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সভাপতিসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী।

Sunday, 20 March 2011

বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমের খোঁজ ৯ মাসেও মিলেনি
রাজধানীতে আড়াই বছরে ৫ হাজার বেওয়ারিশ লাশ উদ্ধার\ অধিকাংশই নৃশংস গুপ্ত খুনের শিকার
কামাল উদ্দিন সুমন : রাজধানীতে গুপ্ত খুনের ঘটনা বেড়ে চলছে। সে সাথে বেড়েছে বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা। গত আড়াই বছরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ ৫ হাজার ২শ ২৫টি বেওয়ারিশ লাশ উদ্ধার করেছে এবং আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম এলাশের দাফন কাজ সম্পন্ন করে। উদ্ধারকৃত লাশের অধিকাংশই নৃঃশংস খুনের শিকার। অনেকের হাত কিংবা পা নেই আবার কারোর চক্ষু উপড়ানো ,অনেক লাশের শরীরে গুলীবিদ্ধ ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। সড়ক দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা, কিংবা রেলে কাটা পড়া বেওয়ারিশ লাশের চাইতে নৃশংস খুনের শিকার বেশী বলে সূত্র জানায়। এদিকে নিখোঁজ হওয়ার ৯ মাস পরও বিএনপি নেতা কাউন্সিলর চৌধুরী আলমের কোন হদিস মিলেনি। গত বছর ২৫ জুন তিনি নিখোঁজ হন। আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম সূত্রে জানা যায়, গত ৫ বছরে ঢাকায় বেওয়ারিশ হিসাবে মোট ৯ হাজার ৫শ ৮৭টি লাশ তারা দাফন করে। এর এর মধ্যে ২০১১ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১৭৬ জন, ২০১০ সালে ১২০৪ জন, ২০০৯ সালে ১৯৭৮ জন, ২০০৮ সালে ১৮৬৭ জন, ২০০৭ সালে ২২৫৯ জন, ২০০৬ সালে ২০৯৯ জনের লাশ দাফন করে। সূত্র জানায়, ঢাকা শহরে গড়ে প্রায় ৫টি লাশ উদ্ধার করা হচ্ছে। এসব লাশ বেশিরভাগই পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের শিকার বলে জানা যায়। সন্ত্রাসীদের অন্তঃকলহ, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ, পূর্ব শত্রুতার জের, রাজনৈতিক শত্রুতা, প্রেমঘটিত বিষয় কিংবা ছিনতাইকারীরা এসব হত্যাকান্ডের পেছনে কাজ করছে। কিন্তু এসব হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা সম্ভব না হওয়ায় কোনো বিচারকাজ পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজে ৩০টি লাশ রাখার ব্যবস্থা আছে বলে মর্গ সূত্রে জানা যায়। এ ছাড়া বছরের কিছু সময় মরচুয়ারি নষ্ট থাকে, ফলে সঠিকভাবে লাশ ব্যবস্থাপনা সম্ভব হচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মর্গে কর্মরত একজন জানান, জায়গার অভাবে কোনো লাশ বেশিদিন রাখা সম্ভব হয় না। দ্রুত দাফন করার ফলে লাশের পরিচয়, মৃত্যুর কারণ বা কারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত এর কোনোটিই উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। সূত্র জানায়, বেওয়ারিশ হিসাবে লাশ দাফন করায় পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। ঘাতকদের পরিচয় কিংবা কোনো ক্লু উদঘাটন না হওয়ায় এসব খুনের কোনো বিচার হচ্ছে না। এতে তারা নতুন উদ্যমে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে ।
ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে বেশিরভাগ হত্যার ঘটনা ঘটে। হত্যাকারীরা লাশ গুম করার উদ্দেশে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ফেলে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও লাশ ঢাকায় আনা হয়। স্থান পরিবর্তনের কারণে লাশের পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় লাশের টুকরা উদ্ধার করা হয়। যাতে তার পরিচয় পাওয়া সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে আমাদেরও তেমন কিছু করার থাকে না। যদি মার্ডার হয় তাহলে তার মামলা হচ্ছে এবং এগুলোর ছবি সিআইডির গেজেটে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, কখনো কখনো বিকৃত লাশ উদ্ধার করা হয়। এসব লাশের ছবি তার আত্মীয়-স্বজন দেখলেও চিনতে পারে না। অনেকে হত্যা করে লাশ রেললাইনে রেখে যায়। রেললাইনে কাটা যেসব লাশ উদ্ধার করা হয় সেগুলোর পরিচয় বের করা কঠিন।
এডভোকেট এলিনা খান বলেন, প্রতি বছর এত বেওয়ারিশ লাশ হওয়ার কথা না। সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে পরিকল্পিত হত্যার শিকার অনেককে বেওয়ারিশ হিসাবে দাফন করা হচ্ছে। ফলে এসব হত্যার কোনো ক্লু উদঘাটিত হচ্ছে না। যাদের দায়িত্ব লাশের ছবি পত্রিকা বা ইন্টারনেট মাধ্যমে প্রকাশ করা, সারাদেশে এর তথ্য পৌঁছে দেয়া, তারা তা সঠিকভাবে করছে না। তারা দায়িত্ব এড়াতে লাশ বেওয়ারিশ হিসাবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে দিয়ে দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অনেক সময় পুলিশের তদন্ত করার গাফিলতি থাকায় অপরাধীরা সুয়োগ নেয়। তারা আইনের ফাঁক-ফোকর বের করে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের এডি সার্ভিস আব্দুল হালিম দৈনিক সংগ্রামকে জানান, লাশ মেডিকেল এবং থানার মাধ্যমে আসে। সাধারণত মেডিকেল থেকে যেসব বেওয়ারিশ লাশ এখানে নিয়ে আসা হয় সেগুলো কাটা-ছেঁড়া অবস্থায় থাকে বিধায় কিভাবে মারা গেল তা উদঘাটন করার সুযোগ থাকে না।
ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয়তে দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে: পররাষ্ট্র সচিব
ঢাকা, ২০ মার্চ (শীর্ষ নিউজ ডটকম): একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদকীয়তে ভুল তথ্য উপস্থাপন হওয়ায় পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
আজ রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সচিব তার অসন্তোষের কথা জানান।
মিজারুল কায়েস বলেন, দ্যা ডেইলি স্টার পত্রিকায় লিবিয়া থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে সঠিক তথ্যের বাইরে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়। বিষয়টি নিয়ে ওই পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে সকালে ফোনালাপ হলেও বিকেল পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এক জন দায়িত্বশীল সাংবাদিকের কাছে দেশ ও জনগণ অনেক কিছু আশা করে। পত্রিকাটি ইংরেজি হওয়ায় বিদেশীদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।
ডেইলী স্টারের বিষয়টি উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সব সংবাদ মাধ্যমের কাছে সরকার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন আশা করে।
(শীর্ষ নিউজ ডটকম/এমএইচআর/টিআই/২২.৫৬ঘ.)


বিএনপি মানুষ খুন করে আর আ.লীগ শান্তি কায়েম করে: হাসিনা

নারায়ণগঞ্জ, ২০ মার্চ (শীর্ষ নিউজ ডটকম): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে মানুষ খুন করে আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে শান্তি কায়েম করে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ৫ বছরে এক মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে পারেনি। অথচ আওয়ামী লীগ গত দুই বছরে ১৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন। আমরা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০২১ রূপকল্প ঘোষণা করেছি। গত আওয়ামী লীগ শাসনামলে ক্ষমতা ছাড়ার সময় দেশে চালের কেজি ১০ টাকা ছিল। কিন্তু চার দলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর চালের দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি হয়। এজন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহবায়ক মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের জাপা (এ) দলীয় সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান, সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা একেএম শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী, শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা, বন্দর থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম সাগর, জেলা জাতীয় পার্টি সভাপতি আবু জাহের প্রমুখ। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার (অব.) এনামুল হক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জের অন্য ৪ সংসদ সদস্য সারাহ্ বেগম কবরী, গাজী গোলাম দস্তগীর বীরপ্রতীক, নজরুল ইসলাম বাবু, আব্দুল্লাহ আল কায়সার প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী জনসভার আগে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট ও বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জে ১০২ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের উদ্বোধন করেন এবং বন্দর উপজেলার হরিপুরে ৩৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী চালের খাদ্যের দাম বেড়েছে। আমরা সব সময়ই খাদ্যের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে চাই। বিদেশ থেকে ৪০/৪৫ টাকা কেজি চাল কিনে এনে ওএমএসের মাধ্যমে ২৪ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সারের দাম তিন বার কমানো হয়েছে। সেচেও ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নতি না করে হত্যা, হামলা, মামলা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি কায়েম করে। ভাঙ্গা সুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি থেকে তারা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ কল্যাণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে এবং সুন্দর থাকে। আমরা ক্ষমতায় এসেই মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বিনামূল্যে বই দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। আগামীতে ডিগ্রি পর্যন্ত পড়ালেখা করতে যাতে কোনো কষ্ট না হয় সে ব্যবস্থা করা হবে। বয়স্ক, বিধবা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালু করা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়েছে। হতদরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য দেয়া হচ্ছে। গৃহহীনদের জন্য খাসজমি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। দেশে ১১ লাখ টন খাদ্য মজুদ রয়েছে। কেউ খাদ্যে কষ্ট পাবে না। বেকারত্ব নিরসনের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে জামানত ছাড়াই এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হচ্ছে।
(শীর্ষ নিউজ ডটকম/ প্রতিনিধি/ এনএম/ এআইকে/২১.৫৫ ঘ.)

 

লেখক : অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ

ছাত্রলীগের গায়ে দুটি নতুন কালো দাগ

ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার
মহাজোট শাসনামলে আওয়ামী লীগের সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের শরীরে যুক্ত দুটি কালো দাগের সঙ্গে এ নিবন্ধে সম্মানিত পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে। তবে পরিচয়পর্বের আগে সাম্প্রতিককালের ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে কিছু বলে নেয়া প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে স্বাভাবিক সময়ে আলোচনা হয় না। আলোচনা হয় অস্বাভাবিক সময়ে, দুঃসময়ে। কখন আসে দুঃসময়? দুঃসময় আসে তখন, যখন ক্যাম্পাসে লাশ পড়ে, বন্দুকযুদ্ধ হয়, হল দখল, সিট দখল, আধিপত্য বিস্তারকেন্দ্রিক সংঘর্ষ চলে, ছাত্রীহলে পুলিশ ঢোকে, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-ভর্তিবাণিজ্যের অর্থ বাটোয়ারাকেন্দ্রিক সংঘর্ষ হয়, অস্ত্র উদ্ধারের জন্য পুলিশ হল ঘেরাও করে, আর প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যকার সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। দুঃসময়ে নাগরিক সমাজ ছাত্ররাজনীতির ভালোমন্দ নিয়ে আলোচনামগ্ন হয়। তবে দুঃসময় কেটে গেলে আবার সবাই সবকিছু ভুলে যান। কিছুদিন পর পুনরায় ঘটে সংঘর্ষ; ঝরে রক্ত, পড়ে লাশ, খালি হয় মায়ের কোল। তারপর আবার আসে দুঃসময়। উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি এ দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারেনি। স্বাধীনতা-উত্তর বহুল আলোচিত সেভেন মার্ডার থেকে শুরু করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বড় বড় অঘটন ঘটার পর প্রায় প্রতিবারই এ ছক অনুযায়ী কাজ হয়। বুয়েটে সনির লাশ পড়লে সুশীল সমাজ ছাত্ররাজনীতি নিয়ে চায়ের কাপে তুফান তুললেও আবার কিছুদিন পর সে আলোচনা স্তিমিত হয়ে যায়। একাডেমিক সংবাদের চেয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পাসগুলোর রাজনৈতিক ও সাংঘর্ষিক সংবাদই গণমাধ্যমে প্রাধান্য পায়। উল্লেখ্য, শুধু ২০১০ সালে ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাঙ্গনে ৯টি লাশ পড়ে। ক্যাম্পাস থেকে চিরতরে হারিয়ে যায় আবু বকর, ফারুক, নাসিম, মহিউদ্দিন, কায়সার, আসাদুজ্জামান, রেজানুল, পলাশ প্রমুখ।
দিনবদলের স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এলেও মহাজোট সরকার আমলে ছাত্ররাজনীতি চলমান দু্ষ্টচক্র থেকে বের হতে পারেনি। এ সময়ে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের অধিকতর অবনতি হয়। চলমান চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির সঙ্গে নতুন উপসর্গ হিসেবে যুক্ত হয় বর্ধিত হারে ভর্তিবাণিজ্য। ছাত্ররাজনীতিকে ছাত্রনেতারা যেন ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করেন। ছোটখাটো ব্যবসা বা চাকরি করার চেয়ে ছাত্ররাজনীতি করাকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান মনে করে সম্প্রতি কতিপয় সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমান পেশা ছেড়ে দিয়ে দ্বিতীয় এমএ বা এমফিল ডিগ্রি করার নামে নতুনভাবে ছাত্রত্ব অর্জন করে ছাত্ররাজনীতিতে ফিরে আসেন।
সরকারি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্র সংগঠনের বাড়াবাড়ি শিক্ষাঙ্গনে পরিচিত বিষয়। এ বাড়াবাড়ি মহাজোট আমলে সীমা অতিক্রম করায় প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পদ ছেড়ে দেন। কিন্তু এরপরও ছাত্রলীগ প্রধানমন্ত্রীর ওই হুমকি আমলে নেয়নি। সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর প্রথম তিন মাসে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে কিছু পত্রিকায় প্রকাশিত ছাত্রলীগের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সংখ্যা পাওয়া যায় যেখানে ৮৮টি, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সাংগঠনিক পদ ছেড়ে দেয়ার পরবর্তী তিন মাসে একই পদ্ধতিতে সংগৃহীত ছাত্রলীগের ১৩৪টি নেতিবাচক কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে যে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সম্মানিত জননেত্রীর হুশিয়ারি উপেক্ষা করে তাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড অব্যাহতভাবে প্রসারিত করেন।
ছাত্র নেতাকর্মীদের মধ্যে আগে বিপদাপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রবণতা ছিল। শিক্ষাঙ্গন বা জাতির স্বার্থে প্রয়োজনে তারা রাজপথে আন্দোলনে নামতেন। কিন্তু এখন তাদের সে সময় নেই। তাদের বৈষয়িক ব্যস্ততা এতই বেড়েছে যে গরিব মানুষ শৈত্যপ্রবাহে মরণাপন্ন হলেও তারা শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময় পান না। শিক্ষানীতির মতো শিক্ষাঙ্গনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বিষয়ে সেমিনার করে বড় ছাত্র সংগঠনগুলো প্রতিক্রিয়া জানানোর অবসর পায় না। বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া, গত ২০ বছরে ছাত্রদের শিক্ষাঙ্গনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট উল্লেখযোগ্য কোনো আন্দোলন সংগ্রাম করতে দেখা যায়নি। তারা এখন নানা কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। ক্ষুদ্র পরিসরে সে কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি দেয়া সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, অতীত সরকারগুলোর ছাত্র সংগঠনও সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করে নিজেদের গায়ে কালো দাগ লাগায়। তবে মহাজোট সরকার আমলে ছাত্রলীগের গায়ে ওই কালো দাগগুলো ছাড়াও দুটি চকচকে নতুন কালো দাগ লাগে। নিম্নে সে দুটি কালো দাগ উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করা হলো।
এক : ইডেন কলঙ্ক
রাজধানীর ইডেন কলেজে ২০১০-এর মার্চে ছাত্রলীগ নেত্রীদের ভর্তিবাণিজ্যকেন্দ্রিক সংঘর্ষে তাদের অনৈতিক অপরাধমূলক কর্মতত্পরতার খবর প্রকাশিত হয়ে জাতিকে লজ্জায় ফেললেও আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ রহস্যজনক কারণে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। ইডেনে ছাত্রলীগের ১২ মার্চের সংঘর্ষের পর ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের নেতারা পরস্পরকে অনৈতিক কাজে জড়িত বলে অভিযোগ করেন। ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করানোর অভিযোগ পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট আকারে প্রকাশিত হয়। এ ধরনের একটি রিপোর্টে বলা হয়, ‘বিবদমান উভয় গ্রুপ পরস্পরের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করে আরও বলেছে, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রীদের জোর করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো ছাড়াও গাউছিয়া মার্কেটের হোটেল ও আজিমপুরের ফ্ল্যাটসহ রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে টার্গেট থাকে সংগঠনের জুনিয়র কর্মী এবং প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের আগত ছাত্রীরা। কেউ নেত্রীদের প্রস্তাবে রাজি না হলে সংশ্লিষ্ট ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়’ (যুগান্তর ১৩.৩.১০)। এ অপকর্মের সত্যতা ছাত্রীদের বক্তব্যেও স্পষ্ট হয়। অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের জনৈক ছাত্রী বলেন, ‘আমার চৌদ্দগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে। আমি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কথামতো না চলায় আমাকে শিবির বানিয়ে হল থেকে বের করে দিয়েছে। আমাকে সব ধরনের অফার করা হয়েছিল। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক টাকার বিনিময়ে নবম শ্রেণীর মেয়েদেরও হলে রেখে তাদের দিয়ে দেহব্যবসা করাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে শিবির বলে হল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে’ (আমার দেশ, ১৩.৩.১০)।
ইডেন কলঙ্কের লজ্জা শিক্ষাঙ্গনসহ রাজনৈতিক অঙ্গন এবং সুশীল সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। বলিষ্ঠ সাংবাদিক আতাউস সামাদ ‘এ কলঙ্ক বড়ই যাতনাময়’ শিরোনামে প্রবন্ধ লিখে এবং সাবেক ছাত্রনেতা হায়দার আকবর খান রনো তাঁর লেখায় এ ঘটনাকে ‘এর চেয়ে লজ্জার, এর চেয়ে ঘৃণার কথা আর কী হতে পারে?’ — বলে আলোচ্য কলঙ্কের লজ্জা থেকে পরিত্রাণের ব্যর্থ চেষ্টা করেন। সম্মানিত বিরোধীদলীয় নেত্রী যুগপত্ সংসদের ভেতরে এবং বাইরে আলোচ্য অনৈতিক কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন। চট্টগ্রামে লালদীঘি ময়দানে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশে বেগম জিয়া বলেন, ‘ছাত্রলীগের ছেলেরা মা-বোনদের ওপর অত্যাচার করছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেঞ্চুরি উত্সব করেছে। ইডেন মহিলা কলেজে তাদের মেয়েরা ভর্তিবাণিজ্য করছে, আবার মন্ত্রী-এমপি ও ব্যবসায়ীদের মনোরঞ্জনেও পাঠাচ্ছে মেয়েদের।’ এ কলঙ্ক এমন স্পষ্টভাবে উন্মোচিত হওয়ার পর ইডেন ছাত্রীদের সামাজিক মর্যাদা হ্রাস পায়। এক মাসের মধ্যে ১৫৯ ছাত্রী ভর্তি বাতিলের আবেদন করেন এবং কিছুসংখ্যক উদ্বিগ্ন অভিভাবক তাদের মেয়েদের হল থেকে বাড়ি নিয়ে যান। এতবড় অভিযোগ এমন নগ্নভাবে উন্মোচিত হলেও সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বা ইডেন কলেজ কর্তৃপক্ষ—কেউই এ বিষয়টি তদন্ত করেছে বলে জানা যায় না। এ কারণে নেত্রীদের কলঙ্ক মোচন না হওয়ায় ইডেন কলঙ্ক ছাত্রলীগের শরীরে কালো দাগ হয়ে রয়ে যায়।
দুই : অভিনব পরীক্ষা
মাননীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ২০১০-এর এপ্রিলে পাবনায় ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের প্রাক্কালে নির্বাচন পদপ্রার্থী ছাত্র নেতাকর্মীদের রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করান। প্রার্থীদের মধ্যে যাতে মাদকাসক্ত না থাকেন সেজন্য এ রক্ত পরীক্ষার ‘শুদ্ধি অভিযান’কে স্থানীয় নেতারা অভিনন্দন জানান। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চারিত্রিক অধঃপতন কোন পর্যায়ে গেলে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে এহেন উদ্যোগ নেয়া সম্ভব তা অনুধাবনযোগ্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রধান সমস্যাগুলো কি রক্ত পরীক্ষা করে নির্ণয় করা সম্ভব? তাদের প্রধান সমস্যা কি মাদকাসক্তি?
সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে মাদকাসক্তির অভিযোগ প্রকাশিত হয়নি। একথা বলার অর্থ এ নয় যে, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মাদকমুক্ত। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে নৈমিত্তিকভাবে উত্থাপিত অভিযোগগুলো ছিল সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, ভর্তিবাণিজ্য, সিটবাণিজ্য, অনৈতিক কাজ, অন্তঃকোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকেন্দ্রিক সংঘর্ষ প্রভৃতি। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী মহোদয় এসব অভিযোগের প্রতি নজর না দিয়ে মাদকের দিকে গেলেন কেন? তিনি কি উল্লিখিত অভিযোগগুলো থেকে ছাত্রলীগ নেতৃত্বকে মুক্ত করতে চান না? ছাত্রলীগ নেতৃত্বকে মাদকমুক্ত করার প্রচেষ্টা অবশ্যই ভালো কাজ। তবে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগগুলো থেকে এ নেতৃত্বকে মুক্ত করা কি অধিক জরুরি ছিল না? কিন্তু দুঃখের বিষয়, প্রতিমন্ত্রী মহোদয় উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেননি। ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি করেন কিনা, ভর্তিবাণিজ্য করেন কিনা, খুন-খারাবি বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত কিনা, সেসব বিষয় যে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব নয়, তা কি মন্ত্রী মহোদয় জানেন না? অবশ্য তিনি যদি রক্ত পরীক্ষা করিয়ে ছাত্রনেতাদের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ভর্তিবাণিজ্য বা অনৈতিক কাজের সম্পৃক্ততা নির্ণয় করাতে পারতেন তাহলে নিঃসন্দেহে বিষয়টি চিকিত্সাশাস্ত্রে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়ে এক্ষেত্রে প্রতিমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক পদক পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করত।
প্রতিমন্ত্রী যদি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রকৃতই স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে চাইতেন, তাহলে এরা যাতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না করতে পারে সেজন্য এদের বিরুদ্ধে তিনি প্রথমেই অস্ত্র উদ্ধার অভিযান করাতেন। চাঁদাবাজ নেতাদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা করাতেন। নেতাদের অবৈধ সম্পদ আছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য তাদের ব্যাংক হিসাব পরীক্ষা করাতেন আর ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের সম্পদের হিসাব গ্রহণ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করাতেন। অবশ্য প্রতিমন্ত্রী তা করান কীভাবে? কারণ, যেখানে তাঁর দল নির্বাচনি ইশতেহারে মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের হিসাব গ্রহণ ও প্রকাশের ওয়াদা করেও বছর দেড়েক গড়িমসির পর সে প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে, সেখানে অপ্রতিশ্রুত ছাত্রলীগ নেতাদের সম্পদের হিসাব গ্রহণ ও প্রকাশ করা মানানসই হয় না। বলা যায়, মন্ত্রী মহোদয়ের ছাত্রনেতাদের রক্ত পরীক্ষার মধ্যে ছাত্রলীগকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা যতটা ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল তাদের বড় অপকর্মগুলো আড়াল করার চাতুরি। এ অভিনব রক্ত পরীক্ষার ঘটনা ছাত্রলীগের শরীরে নতুন কালো দাগ এঁকে দেয়।
শরীরের দাগ মোচনের ওষুধ আছে। ফুটপাতের ওষুধ বিক্রেতাদের কাছেও দাগ নিবারণের মলম পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহার করে মানব শরীরের কালো দাগ মোচন করা সম্ভব। কিন্তু অপকর্মের কারণে অঙ্কিত সংগঠনের কালো দাগ মোচনের ওষুধ বাজারে পাওয়া যায় না। এ দাগ মোচনের একটিমাত্র উপায় আছে। আর তা হলো, অর্জন ও ভোগের রাজনীতি পরিহার করে পরোপকার ও ত্যাগের রাজনীতিতে ফিরে অব্যাহতভাবে ভালো কাজ করার মধ্য দিয়ে দুষ্কর্মের দুর্নাম মুছে দিয়ে এ দাগ নিশ্চিহ্ন করা। দেশবাসী ধৈর্য ধরে দেখতে চায়, ছাত্রলীগ নেতৃত্ব উল্লিখিত প্রক্রিয়ায় এর শরীরের নতুন কালো দাগগুলো মোচন করতে পারে কিনা।
লেখক : অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
akhtermy@gmail.com

সর্বহারাদের প্রত্যাবর্তনে অশান্ত হয়ে উঠছে বরিশাল বরিশাল অফিস আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্রমশ অশান্ত হয়ে ওঠেছে সর্বহারা অধ্যুষিত বরিশালের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল। বিভিন্ন এলাকায় সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীরা বিরোধী দলীয় প্রার্থীকে নির্বাচনী কাজে বাধাসহ নানান ধরনের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের খবর পাওয়া গেছে। এ কাজে আত্মগোপনে থাকা সর্বহারা সন্ত্রাসীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কোনো কোনো এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণার নামে সমর্থক নন এমন নারীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে আসন্ন নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট প্রদান নিয়ে শঙ্কিত অনেকেই। সূত্র মতে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত সর্বহারা সদস্যরা স্ব-স্ব এলাকায় ফিরে এসে অপতত্পরতা শুরু করে। প্রথমদিকে এরা দিনের বেলায় প্রকাশ্যে না এলেও রাতের আঁধারে গোপন বৈঠক করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সম্প্রতি প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দের পর পরই সর্বহারা সদস্যরা বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছে। বিশেষ করে বাবুগঞ্জের আগরপুর, গৌরনদীর সরিকল এবং উজিরপুরের নারায়ণপুর, গুঠিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সর্বহারা সদস্যের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। সূত্র জানায়, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে বাবুগঞ্জের আগরপুর ইউনিয়নে সাবেক দুই সর্বহারা নেতা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর পরই এ দুই নেতার আত্মগোপনে থাকা অনুসারীরা এলাকায় ফিরে আসতে শুরু করে। একই ইউনিয়নে দু’সর্বহারা নেতা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার নিয়ে যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কাও করছেন অনেকেই। বাবুগঞ্জের মতো গৌরনদীর সরিকল ও উজিরপুরের নারায়ণপুর এবং গুঠিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সর্বহারা সদস্যদের আনাগোনা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকার দলীয় প্রার্থীরা বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনী কাজে বাধা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বিভাগীয় উপ-নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে অভিযোগও দাখিল হয়েছে। অনেকে স্ব-স্ব থানায় সাধারণ ডায়রিও করেছেন। সূত্র জানায়, ১৮ মার্চ উজিরপুরের সাতলা ইউনিয়নের নয়াকান্দি এলাকায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ইউনুস হাওলাদারের নির্বাচনী প্রচারণা কাজে বাধা দিয়েছে অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহাগ মোল্লা ও তার সমর্থকরা। এ সময় তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা ধরনের হুমকি দেয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন বিএনপি সম্পাদক মো. মেজবাহ উদ্দিন আমার দেশ’কে বলেন, র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত সাবেক সর্বহারা নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু জাফর মোল্লার বাহিনী তাদের নানাভাবে হুমকিসহ নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। এ কারণে এলাকার ভোটাররা অনেকটা শঙ্কিত। এছাড়া একই ইউনিয়নের পটিবাড়ী গ্রামে নির্বাচনী প্রচারণা করতে এসে এক গৃহবধূকে নির্যাতন করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উজিরপুর থানায় মামলাও হয়েছে বলে উজিরপুর থানার সেকেন্ড অফিসার মো. শামিম শেখ জানিয়েছেন। এদিকে আগৈলঝাড়ায় নির্বাচনী কাজে বাধা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ইলিয়াস তালুকদারের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুর রশিদ সিকদার। এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় উপ-নির্বাচন কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা ও ভয়ভীতি প্রদানসহ নানান বিষয়ে কমিশনে একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

সর্বহারাদের প্রত্যাবর্তনে অশান্ত হয়ে উঠছে বরিশাল

বরিশাল অফিস
আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্রমশ অশান্ত হয়ে ওঠেছে সর্বহারা অধ্যুষিত বরিশালের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল। বিভিন্ন এলাকায় সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীরা বিরোধী দলীয় প্রার্থীকে নির্বাচনী কাজে বাধাসহ নানান ধরনের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের খবর পাওয়া গেছে। এ কাজে আত্মগোপনে থাকা সর্বহারা সন্ত্রাসীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কোনো কোনো এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণার নামে সমর্থক নন এমন নারীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে আসন্ন নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট প্রদান নিয়ে শঙ্কিত অনেকেই।
সূত্র মতে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত সর্বহারা সদস্যরা স্ব-স্ব এলাকায় ফিরে এসে অপতত্পরতা শুরু করে। প্রথমদিকে এরা দিনের বেলায় প্রকাশ্যে না এলেও রাতের আঁধারে গোপন বৈঠক করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সম্প্রতি প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দের পর পরই সর্বহারা সদস্যরা বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছে। বিশেষ করে বাবুগঞ্জের আগরপুর, গৌরনদীর
সরিকল এবং উজিরপুরের নারায়ণপুর, গুঠিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সর্বহারা সদস্যের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে আশঙ্কাজনকভাবে।
সূত্র জানায়, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে বাবুগঞ্জের আগরপুর ইউনিয়নে সাবেক দুই সর্বহারা নেতা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর পরই এ দুই নেতার আত্মগোপনে থাকা অনুসারীরা এলাকায় ফিরে আসতে শুরু করে। একই ইউনিয়নে দু’সর্বহারা নেতা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার নিয়ে যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কাও করছেন অনেকেই। বাবুগঞ্জের মতো গৌরনদীর সরিকল ও উজিরপুরের নারায়ণপুর এবং গুঠিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সর্বহারা সদস্যদের আনাগোনা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকার দলীয় প্রার্থীরা বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনী কাজে বাধা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বিভাগীয় উপ-নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে অভিযোগও দাখিল হয়েছে। অনেকে স্ব-স্ব থানায় সাধারণ ডায়রিও করেছেন। সূত্র জানায়, ১৮ মার্চ উজিরপুরের সাতলা ইউনিয়নের নয়াকান্দি এলাকায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ইউনুস হাওলাদারের নির্বাচনী প্রচারণা কাজে বাধা দিয়েছে অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহাগ মোল্লা ও তার সমর্থকরা। এ সময় তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা ধরনের হুমকি দেয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন বিএনপি সম্পাদক মো. মেজবাহ উদ্দিন আমার দেশ’কে বলেন, র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত সাবেক সর্বহারা নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু জাফর মোল্লার বাহিনী তাদের নানাভাবে হুমকিসহ নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। এ কারণে এলাকার ভোটাররা অনেকটা শঙ্কিত। এছাড়া একই ইউনিয়নের পটিবাড়ী গ্রামে নির্বাচনী প্রচারণা করতে এসে এক গৃহবধূকে নির্যাতন করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উজিরপুর থানায় মামলাও হয়েছে বলে উজিরপুর থানার সেকেন্ড অফিসার মো. শামিম শেখ জানিয়েছেন।
এদিকে আগৈলঝাড়ায় নির্বাচনী কাজে বাধা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ইলিয়াস তালুকদারের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুর রশিদ সিকদার। এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় উপ-নির্বাচন কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা ও ভয়ভীতি প্রদানসহ নানান বিষয়ে কমিশনে একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

mokhbanglar

মুক্ত মাহমুদুর রহমানের আদালতে হাজিরা

স্টাফ রিপোর্টার
দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সদ্য কারামুক্ত মাহমুদুর রহমান মানহানির অভিযোগ এনে দায়ের করা একটি মামলায় গতকাল আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। হাজিরা গ্রহণ শেষে ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী হোসাইন আগামী ১১ মে এ মামলায় হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশ দাখিলের তারিখ ধার্য করেন। এরই মধ্যে হাইকোর্ট এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন।
কারামুক্ত মাহমুদুর রহমান গতকাল সকাল পৌনে ১০টায় ঢাকা সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে পৌঁছলে বিপুলসংখ্যক আইনজীবী ফুলের তোড়া দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। বেলা সোয়া ১০টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে মাহমুদুর রহমানের পক্ষে বিপুলসংখ্যক আইনজীবী এজলাসে হাজির হন। এ সময় সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, এরই মধ্যে উচ্চ আদালত এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। আদালতের এ স্থগিতাদেশ পেশ করতে আমাদের কিছুদিন সময় প্রয়োজন। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ১১ মে আদেশ পেশ করার জন্য তারিখ ধার্য করেন। আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের পরিবার সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর তার ভাই মোরশেদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার অপর বিবাদীরা হলেন প্রকাশ আলহাজ্ব হাসমত আলী, সিনিয়র রিপোর্টার এমএ নোমান ও রিপোর্টার রাকিব হোসেন। পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী মাহমুদুর রহমান গতকাল আদালতে হাজিরা দিতে আসবেন—এ খবর পাওয়ার পর কয়েকশ’ আইনজীবী আদালত চত্বরে জমা হন। আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সিনিয়র আইনজীবী মাসুদ আহমদ তালুকদার, ঢাকা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম তালুকদার, সাবেক পিপি মো. মহসিন মিয়া। এসময় অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক, আবুল খায়ের, জয়নাল আবেদনী মেজবাহ, ওমর ফারুক ফারুকী, মোসলেহউদ্দিন জসিম, সুলতান মাহমুদ, নজরুল ইসলামসহ বিপুলসংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। শুভেচ্ছা জানিয়ে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, সময়ের সাহসী সন্তান মাহমুদুর রহমান অন্যায় ও জুলুমের কাছে মাথানত না করে বীরের বেশে জেল থেকে বেরিয়ে এসেছেন। সত্য প্রকাশে তার আপসহীন ভূমিকায় জাতি উজ্জীবিত হবে। অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমদ তালুকদার বলেন, জুলুমবাজ সরকারের রক্তচক্ষুকে ভয় না করে মাহমুদুর রহমান সত্য ও মানবাধিকারের পক্ষে লড়াই করে চলেছেন। সাহসী ভূমিকা পালনের মাধ্যমে তিনি জাতির হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।

MOKH BANGLAR

প্রধান বিচারপতির কাছে ইসলামী শাসনতন্ত্রের স্মারকলিপি : দেশ অবরোধ করে ইসলামবিরোধী সরকারের পতন ঘটানো হবে

স্টাফ রিপোর্টার
ফতোয়া নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টের দেয়া রায়কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসপরিপন্থী উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবিতে প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। স্মারকলিপি দেয়ার আগে মুক্তাঙ্গনে আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে দলের নেতারা নারীনীতি ও শিক্ষানীতি প্রণয়নসহ সরকারের বিভিন্ন ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, বর্তমান সরকার ইসলামবিরোধী সরকার। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে তারা দেশকে ধর্মহীন করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ইসলামবিরোধী আইন বাতিল করা না হলে সারাদেশ অবরোধ করে এ সরকারের পতন ঘটানো হবে বলে ঘোষণা দেন তারা। নেতারা বলেন, কোরআন-হাদিসবিরোধী রায় দেয়ার এখতিয়ার পৃথিবীর কোনো আদালতের নেই। নির্বাচনী অঙ্গীকার ভুলে সরকার এখন কোরআন-হাদিসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
গতকাল মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ শেষে প্রধান বিচারপতিকে স্মারকলিপি দিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী প্রেস ক্লাবের সামনে পৌঁছার আগেই পুলিশ কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে থামিয়ে দেয়। সেখান থেকে দলের মহাসচিবের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল সুপ্রিমকোর্টে স্মারকলিপি দিয়ে ফিরে আসা পর্যন্ত নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় প্রায় এক ঘণ্টা তারা জিকির করেন এবং সরকারের ইসলামবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে স্লোগান দেন। রাস্তা অবরোধ করে রাখায় এ সময় সচিবালয়ের আশপাশের সড়কগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
মুক্তাঙ্গনের সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, একমাত্র ইসলামী আইন অনুসরণের মাধ্যমেই দুনিয়ায় মানুষ সুখ-শান্তিতে থাকতে পারে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ইসলামবিরোধী কোনো আইন করবে না বলে অঙ্গীকার করেছিল। অথচ এখন তারা কোরআন-হাদিসপরিপন্থী আইন করে মুসলমানদের ঈমান-আকিদা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। সরকার আদালতকে ব্যবহার করে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি বা যেই ইসলামী আইন ধ্বংস করবে তার পরিণতি হবে নমরুদ-ফেরাউনের মতো। তারা দুনিয়ায় টিকে থাকতে পারবে না।
ফয়জুল করিম বলেন, মুমিনরা আলাহর হুকুম মানবে, আরেক দল মানবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো মুসলমান কোরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধে আইন করলে তা আমরা মানতে পারি না। তিনি বলেন, সরকার ইভটিজিং বন্ধের কথা বলে। পবিত্র কোরআনেই ইভটিজিং না করার বিধান আছে। পর্দার বিধান মানলেই ইভটিজিং বন্ধ হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশে পর্দানশীন ও বেপর্দা নারীদের মধ্যে কারা ইভটিজিং ও ধর্ষণের শিকার হয় তা জরিপ করলেই বেরিয়ে আসবে। ইসলামী আইনের মাধ্যমেই মাদক, দুর্নীতিসহ সব অনাচার বন্ধ হয়ে মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে। ফতোয়া তুলে দিলে পারিবারিক বন্ধন উঠে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বর্তমান সরকার ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত না হলে দেশ অবরোধ করে তাদের বিতাড়িত করা হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। এ সরকারও পারবে না।
দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, দেশে একের পর এক ইসলামবিরোধী আইন হওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী চুপ কেন? তিনি কি কোনো চাপের মধ্যে আছেন নাকি মুসলমানদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চান তা জানাতে হবে। দেশ অচল না করা পর্যন্ত কি প্রধানমন্ত্রী সোজা পথে চলবেন না সেটাও পরিষ্কার করতে হবে। শরিয়তবিরোধী কিছু না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। মহানগর সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন বলেন, দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং খুন-জখমের যে তাণ্ডব চলছে তাতে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ইসলাম, মুসলমান, স্বাধীনতা ও মানবতার দুশমন। তাদেরকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করার শপথ নিতে হবে। এ সরকারের হাতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কোনোটাই নিরাপদ নয়। ফেলানীর মতো বাংলাদেশের নাগরিকদের বিনা কারণে সীমান্তে হত্যা করে ভারত কাঁটাতারে লটকিয়ে রাখছে, অথচ সরকার প্রতিবাদও করছে না। উল্টো ভারতকে বিনা পয়সায় ট্রানজিট দিয়ে বাংলাদেশকে পরাধীন করার ষড়ষড়ন্ত্র করছে। অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে দেশকে ধর্মহীন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ সরকারের হাতে দেশের মানুষের জান-মাল ও ধর্মীয় মূল্যবোধ নিরাপদ নয়।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট শাহনেওয়াজ, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন খান, আহমদ আবদুল কাইয়ুম, মাওলানা আবু সাঈদ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট এরফান খান প্রমুখ। সমাবেশ থেকে একই দাবিতে ২৪ মার্চ মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা এবং ফতোয়া বিষয়ক রায় ঘোষণার দিন হাইকোর্টের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এদিকে প্রধান বিচারপতিকে দেয়া স্মারকলিপিতে ৫ দফায় বলা হয়েছে—আলাহর আইনের বিরুদ্ধে রায় দেয়ার এখতিয়ার কারও নেই। তাই হাইকোর্ট প্রদত্ত ফতোয়াবিরোধী রায় অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, ইসলামী বিধিবিধান বা শরিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের মাধ্যমে কোনো প্রকার স্বপ্রণোদিত রুল জারি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সম্প্রতি হিজাবের বিরুদ্ধে আদালত প্রদত্ত রুল বাতিল করতে হবে, প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইনকে সম্পূর্ণ ইসলামী শরিয়া মোতাবেক ঢেলে সাজাতে হবে, আল্লাহ, রাসুল ও ইসলামের বিধানের বিরুদ্ধে কোনো আইন পাস করা থেকে আদালতকে এবং দেশের যে কোনো সংস্থাকে এ জাতীয় কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে, বিদ্যমান ইসলাম ও শরিয়াবিরোধী সব আইন পর্যায়ক্রমে বাতিলের উদ্যোগ নিতে হবে এবং দেশের সব ধর্মের মানুষের ধর্মীয় অধিকার সুরক্ষা এবং ধর্মীয় বিষয়াদির সমাধানকল্পে আদালতে পৃথক ধর্মীয় বেঞ্চ গঠন করতে হবে।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাত্ শেষে মাওলানা ইউনুস সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান বিচারপতির কাছে আমরা স্মারকলিপি পেশ করেছি। তিনি স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন এবং কোরআন-হাদিসবিরোধী কোনো রায় না দেয়ার বিষয়ে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি আমাদের আরও বলেছেন, আদালত এমন কোনো আদেশ দেবেন না, যা মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এবং দেশের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
প্রসঙ্গত, প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চে ফতোয়া নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিলের শুনানি হচ্ছে। আজও শুনানি হবে।
সম্মিলিত পেশাজীবী ফোরাম : সাবেক সচিব, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও গবেষক শাহ আবদুল হান্নান বলেছেন, কোরআনের বিধান অপরিবর্তনীয়। আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন কোরআন শরিফে নারীদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছেন। তাই নারী অধিকার বাস্তবায়নের জন্য নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন নেই। যারা এ ধরনের দুঃসাহস দেখাচ্ছে তাদেরকে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হবে। তিনি সরকারকে এ ধরনের হটকারী তত্পরতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সম্মিলিত পেশাজীবী ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত ‘নারী উন্নয়ন নীতিমালা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাহ আবদুল হান্নান এসব কথা বলেন। ফোরামের সহ-সভাপতি ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন সুপ্রিমকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইউএবি রাজিয়া আক্তার বানু, বিশিষ্ট আইনজীবী ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট ফেরদৌস আক্তার ওয়াহিদা, সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল-আমিন, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা ও ড. আবদুস সামাদ। মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন কৃষিবিদ গোলাম রাব্বানী।
সম্মিলিত ওলামা পরিষদ : নারীনীতি বাতিল, ফতোয়া নিষিদ্ধের চক্রান্ত বন্ধ, ধর্মহীন শিক্ষানীতি সংশোধন এবং ইফা ডিজির অপসারণ দাবিতে ১৪ মে রাজধানীতে সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদ ঘোষিত মহাসমাবেশ সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া ২৫ মার্চ সব বিভাগীয় ও বড় জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও ১ এপ্রিল সব থানায় বিক্ষোভ সমাবেশ করারও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল সংগঠনের সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় নেতারা বলেন, ওলামা পরিষদের ওইসব দাবি বর্তমানে গণদাবিতে পরিণত হয়েছে।
ছাত্র মজলিস : নারীনীতির কোরআনবিরোধী ধারা বাতিলের দাবিতে এবং ফতোয়া নিষিদ্ধে হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২৪ ও ২৫ মার্চ দেশব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল। গতকাল কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক বিশেষ সভায় সংগঠনের সভাপতি মুহাম্মদ শায়খুল ইসলাম এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
যুব মোর্চা : ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক আহূত ৪ এপ্রিল দেশব্যাপী ইসলাম ও কোরআন রক্ষার হরতালের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন ইসলামী যুুব মোর্চা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল বিকালে যুব মোর্চার লালবাগস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাহী কমিটির এক জরুরি সভায় এ সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
খেলাফত মজলিস : একই দাবিতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ২৪ মার্চ দেশব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর অংশ হিসেবে রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে মানববন্ধন করা হবে।

 

 2.

নড়াইলে নিজ দলের সন্ত্রাসীদের হাতে ছাত্রলীগ সভাপতি খুন

নড়াইল প্রতিনিধি
অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নড়াইল সদর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আমিরুল ইসলাম অপু (২৫) প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছেন। গতকাল বেলা পৌনে বারোটায় শহরের মুচিপোল এলাকায় সন্ত্রাসীরা অপুকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে অপু মারা যান। অপু শহরের নিশিনাথ এলাকার আবদুল হালিম বিশ্বাসের ছেলে। এ সময় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাজেদুল ইসলাম সাবু ও যুবলীগ নেতা রানা সন্ত্রাসীদের হাতে আহত হন। তাদেরকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপু মারা যাওয়ার খবরে তার গ্রুপের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা সদর হাসপাতাল ও পুরাতন বাস টার্মিনালের সোনারগাঁও হোটেলে ভাংচুর চালায়। নিশিনাথতলার কওসার শেখের বাড়িতেও ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তারা। সদর হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
আহত সাজেদুল ইসলাম সাবু ও রানা জানান, অপুসহ তারা কয়েকজন মুচিপোলে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় যুবলীগ নেতা আলমগীর ওরফে কাহার আলম, নান্না, ছাত্রলীগ ক্যাডার অলিদ, মিথুন, সজিব, বাপ্পি, তুষার, রয়েল, আজিমের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তাদের ঘিরে ফেলে। তারা ধারাল অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে অপুকে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়। সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই অপু মারা যায়। নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম জানান, আধিপত্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে অপু খুন হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত বিষয় জানা সম্ভব হবে।
3.

জাহানমণির মুক্ত নাবিকরা দেশে ফিরছেন আজ

চট্টগ্রাম ব্যুরো
সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া বাংলাদেশী জাহাজ এমভি জাহান মণির নাবিকরা দেশে ফিরছেন আজ। ২৫ নাবিক ও এক মহিলাসহ অপহৃত ২৬ জন আজ বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন বলে জানিয়েছেন জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান ব্রেভ রয়েল শিপিং ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের মেরিন সুপারিনটেনডেন্ট ক্যাপ্টেন গোলাম মোস্তফা।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগর থেকে বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ এমভি জাহান মণি সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জলদস্যুদের হাতে ১০০ দিন আটক থাকার পর ১৪ মার্চ এক নাবিক পত্নী ও ২৫ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্তি পায়। মুক্তি পাওয়ার ৫ দিন পর শনিবার সকালে এমভি জাহান মণি ওমানের সালালা বন্দরে নোঙর করে। সালালা বন্দরে পৌঁছার পর ওমানের রাষ্ট্রদূত ও মালিকপক্ষ নাবিকদের বরণ করে নেন। জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া নাবিকরা হলেন জাহাজের মাস্টার ফরিদ আহমেদ, চিফ অফিসার আবু নাসের মো. আবদুল্লাহ মজুমদার, সেকেন্ড অফিসার এসএম নূর-ই আলম, থার্ড অফিসার কামরুল হোসাইন, ডেক ক্যাডেট শরিফুল ইসলাম, চিফ ইঞ্জিনিয়ার মতিউল মওলা, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত কুমার মণ্ডল, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সাহাবুল আলম, ইঞ্জিন ক্যাডেট শাহরিয়ার রাব্বী, সিম্যান রুহুল আমিন, এমদাদ হোসাইন, নাজিম উদ্দিন, আবদুল্লাহ ফাত্তাহ ও রবিউল ইসলাম, গ্রেসার ফরিদুল ইসলাম, কিবরিয়া আহমেদ, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, চিফ কুক মশিউর রহমান, জেনারেল স্টুয়ার্ড জসিম উদ্দিন, ডেক ফিটার মোহাম্মদ ইদ্রিস, ইঞ্জিন ফিটার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, ফার্স্ট ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবুল হোসাইন ও তার স্ত্রী রুখসানা বেগম এবং সেকেন্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার।
মঙ্গলবার জাহান মণির মুক্ত নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার কথা থাকলেও নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ওমানের বাংলাদেশ দূতাবাসের তত্পরতায় ভিসা ও ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে যাওয়ায় নির্ধারিত দিনের একদিন আগেই তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
আজ বিকাল ৩টায় চট্টগ্রামে পৌঁছার পর নাবিকরা বিমানবন্দর থেকে সরাসরি নগরীর আগ্রাবাদে হোটেল সেন্টমার্টিনে আসবেন। সেখানে জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদের সংবর্ধনা দেয়া হবে।
4.

৫১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে সালাহউদ্দিন কাদেরের স্ত্রীর মামলা

স্টাফ রিপোর্টার
৫১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নতুনচন্দ্র সিনহার ছেলে প্রফুল্লচন্দ্র সিনহা, এটিএন নিউজের চেয়ারম্যান, দৈনিক সমকাল পত্রিকার সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সালমা ইসলাম, দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে ঢাকা জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী মিসেস ফারহাত কাদের চৌধুরী ঢাকার চতুর্থ যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করলে বিচারক ২২ মে বিবাদীদের জবাব দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, প্রফুল্লচন্দ্র সিনহা ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী গ্রেফতার হওয়ার পর এবং আজ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সাক্ষাত্কারে এসে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে তার বাবা নতুনচন্দ্র সিনহার হত্যার সঙ্গে জড়িত এবং মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীও গুলি করেছেন বলে অভিযোগ করেন। গত ১৮ জানুয়ারি এটিএন নিউজে, ২৫ সেপ্টেম্বর সমকালে, ২৫ জানুয়ারি আমাদের সময়, ২৫ সেপ্টেম্বর যুগান্তরে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে সংবাদ পরিবেশন করা হয়।
আর্জিতে বলা হয়, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কোনোক্রমেই পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না; অধিকন্তু প্রফুল্লচন্দ্র সিনহার বড়ভাই সত্যরঞ্জন সিনহা ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন এবং সরাসরি স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেন। মামলার আর্জির সঙ্গে ১৯৭১ সালের ১৫ জুন সত্যরঞ্জন সিনহাকে শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়ার গেজেট নোটিফিকেশনের কপি দাখিল করা হয়। তাই মামলার বাদিনী বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে নতুনচন্দ্র সিনহাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে তাকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করায় ৫১০ কোটি টাকা দাবি করে ক্ষতিপূরণ মামলাটি দায়ের করেন।
5.

মাহমুদুর রহমানকে জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে : কাদের সিদ্দিকী

স্টাফ রিপোর্টার
সদ্য কারামুক্তি উপলক্ষে আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। মাহমুদুর রহমানকে লেখা এক শুভেচ্ছাবার্তায় তিনি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, তার পরিবার ও দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সাংবাদিক জগতের পথিকৃত ইত্তেফাক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ছাড়া আর কেউ সরকারের রোষানলে পড়ে তার মতো দীর্ঘ সময় কারা নির্যাতন ভোগ করেননি এবং জনগণের আস্থাভাজন সম্পাদকও হননি। দীর্ঘ কারাভোগে তার প্রতি জনগণের যে আস্থা এবং বিশ্বাস জেগেছে, তা যদি লোভ লালসার ঊর্ধ্বে উঠে রক্ষা করেন বা করতে পারেন তাহলে দীর্ঘ সময় জনগণের হৃদয়ে আপনার স্থান ধরে রাখতে পারবেন।
কাদের সিদ্দিকী মাহমুদুর রহমানের দীর্ঘায়ু কামনা করে শুভেচ্ছা বাণীতে আরও বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন ন্যায় ও সত্যের পক্ষে থাকার জন্য তাকে শক্তি দান করুন এবং তার পরিবার পরিজনদের নিরাপদ, সুস্থ রাখুন এ প্রত্যাশা করি।
6.

সংবিধান ছাড়াই চলছে দেশ -মওদুদ : সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে পুনর্মুদ্রণ হয়েছে -শফিক

সংসদ রিপোর্টার
সংবিধান ছাড়াই দেশ চলছে—এমন অভিযোগ করে এ বিষয়ে সংসদ নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সংসদে ব্যাখ্যা দাবি করেছেন সাবেক আইনমন্ত্রী বিএনপির সিনিয়র সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, সংবিধান নিয়ে দেশবাসী বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন। দেশে এখন কোনো সংবিধান নেই। একটি খসড়া সংবিধানের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এই সংবিধানটিও মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়নি। তাই এই খসড়া সংবিধান অসাংবিধানিক, বেআইনি ও অবৈধ। এই অবৈধ সংবিধানের ওপর ভিত্তি করে দেশ চলতে পারে না। মওদুদ আহমদের এই বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সংসদকে জানান, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের আলোকেই সংবিধান পুনর্মুদ্রণ হয়েছে। আর সর্বোচ্চ আদালতের রায় সবাই মানতে বাধ্য। তবে স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট বলেন, এ প্রসঙ্গ নিয়ে পরে সময় নিয়ে আলোচনা করা হবে। তখন আইনমন্ত্রী ৩০০ বিধিতে জবাব দেয়ার সুযোগ পাবেন।
গতকাল জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনার আগে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর চাইলে স্পিকার আবদুল হামিদ তাকে এক মিনিটের জন্য ফ্লোর দেন। মওদুদ আহমদ বলেন, সংবিধান নিয়ে দেশের মানুষ চরম বিভ্রান্তিতে আছেন। সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী বলেছেন পুনর্মুদ্রিত সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলবে। আবার তিনি বলেছেন, সংবিধান সংশোধনের একমাত্র অধিকার সংসদের। আসলে কোনটি মূল সংবিধান। অথচ সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা আদালতকে দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, এই সংবিধান সংশোধন নিয়ে আইনমন্ত্রী ও সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের দ্বন্দ্ব রয়েছে। আইনমন্ত্রী নিজেও জানেন সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার আদালতের নেই। এই ঘটনার সূত্রপাত যখন হয় আমরা বিরোধী দল হিসেবে আপত্তি তুলেছিলাম। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছিলেন। তখন বলা হয়েছে, সংসদে সংশোধনী প্রস্তাব পাস করা হবে। কিন্তু তা হয়নি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট বক্তব্য আশা করি।
এই পর্যায়ে স্পিকার আবদুল হামিদ মওদুদকে উদ্দেশ করে বলেন, এ নিয়ে আপনি কথা বলতে চাইলে আরও অনেকে কথা বলতে চাইবে। কিন্তু সংবিধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই এ নিয়ে এখানে কোনো বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ নেই। পরে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ফ্লোর চাইলে তাকেও ১ মিনিট সময় দেন স্পিকার। এ সময় আইনমন্ত্রী বলেন, মওদুদ আহমদ নিশ্চয়ই জানেন সামরিক ফরমান দিয়ে কখনও সংবিধান পরিবর্তন করা যায় না। একমাত্র সংসদই সংবিধানে সংযোজন-বিয়োজন করতে পারে। কিন্তু তারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন; তখন জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক ফরমান দিয়ে সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে।মহামান্য কোর্ট ওই অংসাংবিধানিক বিধানগুলো বাদ দিয়েছেন। পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে সংবিধানকে পুনস্থাপিত করেছেন। ওই রায় অনুযায়ী আমরা সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করেছি। আর এটাই সঠিক। এখানে কোনো জটিলতা নেই। সুপ্রিমকোর্ট যে রায় দেবেন তা সবাইকে মেনে নেবেন—এটাই আইনের বিধান।
7

চিকিত্সার জন্য সৌদী গেলেন খালেদা জিয়া : মির্জা ফখরুল ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব

স্টাফ রিপোর্টার
বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া চিকিত্সার জন্য সৌদি আরব গেছেন। সৌদী সরকারের আমন্ত্রণে গতকাল রাত সোয়া ৯টায় বিমানযোগে সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি। সৌদি আরব যাওয়ার প্রাক্কালে বেগম খালেদা জিয়া দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
উল্লেখ্য, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন গত বুধবার ইন্তেকাল করায় দলের মহাসচিবের পদ শূন্য হয়। বিএনপি সূত্র জানায়, বেগম জিয়া সৌদি আরবের বিখ্যাত কিং আবদুল আজিজ হাসপাতালে তার পায়ের চিকিত্সা নেবেন। এ সময় তিনি ওমরাহ পালন করবেন। আগামী ২৯ মার্চ তার ঢাকায় ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হয়েছেন তার ভ্রাতৃবধূ বেগম কানিজ ফাতেমা, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, বিশেষ সহকারী মাহবুব আল আমিন ডিউ, একান্ত সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ, ফটোগ্রাফার নুরুদ্দিন আহমেদ নুরু।
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে গতকাল রাতে বিমানবন্দরে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মে. জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, ড. ওসমান ফারুক, আবদুল হালিম, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুল কাইয়ুম, বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকতউল্লা বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এম ইলিয়াস আলী, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নাজিমউদ্দিন আলম, আবুল খায়ের ভুইয়া এমপি, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এমপি, হাবিব উন নবী খান সোহেল, লুত্ফুর রহমান কাজল, আবদুস সালাম, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সানাউল্লাহ মিয়া, নূরী আরা সাফা, অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহীন, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, শিরীন সুলতানা, রেহেনা আক্তার রানু, নিলুফার চৌধুরী মনি, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, শাম্মী আক্তার, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফুল আলম নিরব, আ ক ম মোজাম্মেল, শফিউল বারী বাবু, হাফেজ আবদুল মালেক, রফিক শিকদার, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান খান শিমুল প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, এর আগে সৌদী বাদশাহর আমন্ত্রণে বেগম খালেদা জিয়া গত বছরের ৩০ আগস্ট সে দেশ সফর করেন।
মির্জা ফখরুল মহাসচিবের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পেলেন
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাতে সৌদি আরব যাওয়ার প্রাক্কালে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তাকে এ দায়িত্ব দিয়ে যান বলে জানান বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক।
আমার দেশকে তিনি বলেন, বিমানবন্দরে ম্যাডাম আমাকে বলেছেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ আমার দেশকে বলেন, ম্যাডাম সৌদি আরবে চিকিত্সার জন্য গেছেন। মহাসচিব নেই। এ অবস্থায় তিনি সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখাশোনায় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্ব পালনের জন্য বলে গেছেন।
 

ভারতের কাছে হারলেও শেষ আটে ও. ইন্ডিজ ভারত

ভারতের কাছে হারলেও শেষ আটে ও. ইন্ডিজ ভারত : ২৬৮/১০, ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৮৮/১০ (৪২)

কবিরুল ইসলাম
গ্রুপের শেষ ম্যাচে ভারতের কাছে হেরেও কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গতকাল এম চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে ৮০ রানে পরাজিত হয় তারা। যুবরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যের কারণেই বিশাল এ জয় পায় ধোনি-শচীনরা। আগে ব্যাট করা ভারতীয়রা যুবরাজের সেঞ্চুরির (১১৩) ওপর ভর করে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ২৬৮ রান জমা করে। যদিও ভারতীয়রা তাদের ইনিংসটা ৩০০ রানের কোটা পার করতে পারতো। কিন্তু পেসার রামপালের কারণে সে আশা পূরণ হয়নি স্বাগতিকদের। মাত্র ২৬৮ রানেই শেষ হয়ে যায় তাদের স্কোর। রামপাল ৫ উইকেট তুলে নেন। জবাবে জহির খানের মারাত্মক বোলিংয়ের কারণে মাত্র ১৮৮ রানেই শেষ হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। ড্যারেল স্মিথের ৮১ রানের ইনিংসের পরও এ হার বড়ই দুঃখজনক ক্যারিবীয়দের কাছে। এ জয়ের ফলে ভারত ৯ পয়েন্ট তুলে নিয়ে গ্রুপের
শীর্ষে রয়েছে। তারা ২৪ মার্চ আহমেদাবাদে আরেক শিরোপা প্রত্যাশী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে। এ পরাজয়ের ফলে শেষ আটে যেতে কোনো হিসাব-নিকাশ কষতে হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। কারণ, বাংলাদেশকে রান রেটে পেছনে ফেলে আগেই কোয়ার্টার নিশ্চিত হয়েছে তাদের। তারা প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে।
চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে দিবা-রাত্রির এ ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় দলপতি মহেন্দ্র সিং ধোনি। যুবরাজ সিংয়ের অনবদ্য সেঞ্চুরি (১১৩) এবং বিরাট কোহলির অর্ধশত (৫৯) রানের সুবাদে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ২৬৮ রানের পাহাড় গড়ে তারা। যদিও ইনিংসের সূচনাটা তাদের মোটেও সুখকর ছিল না। দলীয় ৮ রানেই রামপালের গতির সামনে দাঁড়াতে পারেননি লিটল মাস্টার ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার। শচীনের বিদায়ের ৪৩ রান পর আরেক ওপেনার গৌতম গাম্ভিরও বিদায় নিয়েছিলেন একই বোলারের বলে। দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিছুটা চাপে পড়া ভারতীয় ইনিংসের ভিত্তি গড়ে দেন কোহলি এবং যুবরাজ। এ দুই ব্যাটসম্যানের লড়াকু ইনিংসের কারণেই প্রাথমিক চাপটা সামাল দেয় তারা। তাদের মারমুখী ব্যাটিংয়ের সামনে লাইন হারিয়ে ফেলেন ক্যারিবীয় বোলাররা। দলীয় ইনিংসে ১২২ রান জমা করে ব্যক্তিগত ৫৯ রানে কোহলি সাজঘরে ফেরেন পেসার রামপালের শিকার হয়ে। এরপর মাঠে নামা অধিনায়ক ধোনিকে সঙ্গে নিয়ে দলকে আরও উপরে টেনে তুলতে থাকেন যুবরাজ। এই হার্ডহিটার বিপজ্জনক হয়ে ওঠেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের কাছে। দলীয় ২১৮ রানে ধোনি বিদায় নিলেও যুবরাজকে থামাতে পারেননি সামিবাহিনী। যুবরাজ নিজের বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১১২ বল খরচায়। তার সেঞ্চুরির ইনিংসে ছিল দশটি চার এবং একটি ছয়ের মার। সেঞ্চুরি পূরণ করার মাত্র ১৩ রান পরেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরতে হয় যুবরাজকে। ১২৩ বলে সাজান নিজের ইনিংসটি। যুবরাজ ও কোহলি ছাড়া ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা আর কেউ নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। পেসার রামপাল ছিলেন ভারতীয় বোলারদের সামনে বল হাতে একমাত্র সফল। রামপাল একাই উপড়ে ফেলেন ভারতীয় পাঁচ ব্যাটসম্যানের উইকেট। ফলে সব উইকেট হারিয়ে তারা সংগ্রহ করে ২৬৮ রান। এছাড়া এন্ড্রু রাসেল নিয়েছেন ২ উইকেট।
জয়ের জন্য ক্যারিবীয়দের প্রয়োজন ছিল ২৬৯ রান। এ রানটি তাদের কাছে কোনো কষ্টকর ছিল না। কিন্তু কাল চিদাম্বারাম স্টেডিয়াম যেন পেসারদের স্বর্গরাজ্য হয়ে ওঠে। এতদিন যে উইকেট ছিল স্পিনারদের দখলে, কাল সেটা চলে যায় পেসারদের হাতে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতীয় পেসার জহির খান আঘাত হানেন প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনে। তার গতির সামনে এলোমেলো হয়ে যায় স্মিথ, সারওয়ানদের ব্যাটিং অর্ডার। যদিও তাদের ইনিংসের গোড়াপত্তনটা ছিল দারুণ। ইডওয়ার্ডের উইকেট দলীয় ৩৪ রানে হারালেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান স্মিথ এবং ব্রাভো। তাদের ঝড়ো ইনিংসের সামনে ভারতীয় বোলাররা প্রথমে কিছুটা চাপে ছিলেন। কিন্তু ৫৭ রানে ব্রাভোর বিদায়ের পরও উজ্জ্বল ছিল ক্যারিবীয়দের ইনিংস। রানের বন্যায় ভারতীয় বোলিং লাইনকে ভাসিয়ে দিচ্ছিলেন স্মিথ এবং সারওয়ান। তবে বিপদটা শুরু হয় ওপেনার ড্যারেল স্মিথের বিদায়ের পরপরই। ব্যক্তিগত ৮১ রানে তাকে জহির খান সাজঘরে ফিরিয়ে দিয়ে দলকে আনন্দে ভাসিয়ে তোলেন। আর এ উইকেটটাই মূলত ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। স্মিথ ৯৭ বলে ৭ চার এবং একটি ছয় দিয়ে নিজের ইনিংস সাজান। এরপর শুরু হয় ভারতীয় পেসারদের দাপট। জহির খান-অশ্বিনদের সামনে দাঁড়াতেই পারছিলেন না এন্ড্রু রাসেল-বিষুরা। মাত্র ১৮৮ রানেই গুটিয়ে যায় ক্যারিবীয়দের ইনিংস। নিচের সারির ৭ ব্যাটসম্যান মিলে করেছেন ১৫ রান। মিডল অর্ডারের এ ব্যর্থতার কারণে ৮০ রানে পরাজয়ের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। জহির খান ৩টি এবং অশ্বিন নেন ২ উইকেট। বিশ্বকাপে এটাই অভিষেক ম্যাচ অশ্বিনের। ইডওয়ার্ড এবং রামপালকে সাজঘরে পাঠান তামিল নাড়ুর এ বোলার।

সিদ্ধিরগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান : এক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঢুকতে পারলেও ব্যর্থ হয়েছেন ২৪ আ’লীগ নেতা

সিদ্ধিরগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান : এক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঢুকতে পারলেও ব্যর্থ হয়েছেন ২৪ আ’লীগ নেতা

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ
পুলিশ ও র্যাবের মোস্ট ওয়ান্টেড এক শীর্ষ সন্ত্রাসী সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত্ কেন্দ্রের ভেতর গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে পারলেও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ ২৪ নেতা প্রবেশের অনুমতি পাননি। যদিও তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ইস্যুকৃত নিরাপত্তা পাস ছিল। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো সিদ্ধিরগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে এ ঘটনার প্রতিবাদে ৩ এমপির সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতাকর্মীরা বন্দরের মদনগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত্ কেন্দ্রের ভেতর ১০০ মেগাওয়াট কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট উদ্বোধন করতে আসেন বেলা পৌনে ২টার দিকে। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত্ কেন্দ্রের ভেতর অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন। তার পেছনে অপর একটি গাড়িতে চড়ে সিদ্ধিরগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী নজরুল ইসলাম ওরফে বেদ্দপ নজরুলও ভেতরে যায়। আধাঘণ্টা পর সাড়ে ১২টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান এবং
হাজী ইয়াছিনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২৪ নেতা আসেন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। বিদ্যুত্ কেন্দ্রের প্রধান গেটে তাদের আটকে দেয়া হয়। এ সময় তারা নিরাপত্তা পাস দেখান। কিন্তু তারপরও তাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এ নিয়ে শুরু হয় হৈ-চৈ।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মজিবুর রহমান স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত্ কেন্দ্রের ভেতরের প্রোগ্রাম সন্ত্রাসীদের জন্য, আমরা মদনগঞ্জ জনসভায় অংশগ্রহণ করব। বিদ্যুত্ কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান ও জনসভায় আমাদের সচিব দাওয়াত করেছেন এবং ডিসি অফিস থেকে ২৪ জনকে সিকিউরিটি পাসও দেয়া হয়েছে। সেখানে আমরা যখন বিদ্যুত্ কেন্দ্রের গেটে গেলাম (দুপুর সাড়ে ১২টা), তখন গেট থেকে বলে লিস্টে আপনাদের নাম নেই, আপনারা ভেতরে যেতে পারবেন না। আমরা বলেছি, ঠিক আছে আলহামদুলিল্লাহ গেলাম না। ওই সময় মজিবুর রহমানসহ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সন্ত্রাসী নজরুল ভেতরে কিভাবে ঢুকেছে? ওর কোনো পদ-পদবী নেই, সিকিউরিটি পাস পাওয়ার কথা নয়। তারপরও এক চিহ্নিত সন্ত্রাসী কিভাবে ভেতরে ঢুকেছে এটাই প্রশ্ন? এ নিয়ে গেটে নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। খবর পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার, নজরুল ইসলাম বাবু ও গোলাম দস্তগীর গাজী ছুটে এসে নেতাদের বলেন, এখানে যা হওয়ার হয়েছে আপনারা মদনগঞ্জের জনসভায় চলে যান। তখন ৩ সংসদ সদস্যের কাছে নেতারা প্রশ্ন রাখেন, আমরা দাওয়াত ও নিরাপত্তা পাস পেয়ে যেতে পারলাম না, কিন্তু এক সন্ত্রাসী কিভাবে গেল? এক পর্যায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, সন্ত্রাসী নজরুল সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের অপরাধী তালিকায় ৪ ও র্যাবের তালিকায় ৩ নাম্বারে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ এবং বিভিন্ন থানায় একাধিক হত্যাসহ ১৫টি মামলা ও ৬টি জিডি রয়েছে।

সংসদে সংবিধান নিয়ে মওদুদ-শফিকের বাকযুদ্ধ

সংসদে সংবিধান নিয়ে মওদুদ-শফিকের বাকযুদ্ধ
ঢাকা, ২০ মার্চ (শীর্ষ নিউজ ডটকম): জাতীয় সংসদে সংবিধান নিয়ে বাকযুদ্ধে জড়িয়েছেন সাবেক আইন মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও বর্তমান আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। আজ রোববার সংসদ অধিবেশনের শুরুতেই তারা এই বাকযুদ্ধে জড়ান।
পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সংবিধান নিয়ে দেশবাসী বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। দেশে এখন কোনো সংবিধান নেই। একটি খসড়া সংবিধানের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এই সংবিধানটিও মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়নি। তাই এই খসড়া সংবিধানও অবৈধ। এই অবৈধ সংবিধানের উপর ভিত্তি করে দেশ চলতে পারে না। সংবিধান সংশোধন নিয়ে আইনমন্ত্রী ও সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটির সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখ করে তিনি এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যা দাবি করেন।
এই পর্যায়ে স্পিকার আব্দুল হামিদ এডভোকেট মওদুদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এ নিয়ে আপনি কথা বলতে চাইলে আরো অনেকে কথা বলতে চাইবে। কিন্তু সংবিধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই এ নিয়ে এখানে কোনো বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ নেই। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ফ্লোর চাইলে তাকেও ১ মিনিট সময় দেন স্পিকার।
এসময় শফিক আহমেদ বলেন, মওদুদ আহমদ নিশ্চয়ই জানেন- সামরিক ফরমান দিয়ে কখনো সংবিধান পরিবর্তন করা যায় না। কিন্তু তারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন; তখন জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক ফরমান দিয়ে সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ৫ম সংশোধনী বাতিলের রায় দিয়ে সংবিধানকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছে।
পরে এনিয়ে কথা বলার জন্য বিএনপির সিনিয়র সাংসদ ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ফ্লোর চাইলে তাকে ফ্লোর দেয়া হয়নি। এ সময় স্পিকার বলেন, এ নিয়ে অন্য কোনো সময় আলোচনা হবে। পরে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনা করে এই সময় নির্ধারণ করা হবে।

দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরকারকে সতর্ক করলেন জলিল

           দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরকারকে সতর্ক করলেন জলিল
ঢাকা, ২০ মার্চ (শীর্ষ নিউজ ডটকম): দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক করলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য আব্দুল জলিল। তিনি বলেছেন, গত ২ বছরে বহু চেষ্টার পরও ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার। হয়তো দ্রব্যমূল্য এখনো জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়নি, তবে বিষয়টি ইতিমধ্যেই এই সরকারকে অনেক ভুগিয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারকে আরো সতর্ক থাকতে হবে।
রোববার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিদ্যুৎ সংকট কাটানোসহ সংসদ কার্যকর করার ব্যাপারেও বর্তমান সরকার অসফল বলে উল্লেখ করেন জলিল। তবে এই অসফলতার জন্য তিনি বিরোধী দলকে দায়ী করেন।

Bashundhara chief sent to jail

Bashundhara chief sent to jail

Bashundhara Group Chairman Ahmed Akbar Sobhan alias Shah Alam
A Dhaka court on Sunday sent Bashundhara Group Chairman Ahmed Akbar Sobhan alias Shah Alam to jail in a tax evasion case, in which he was sentenced to eight years’ imprisonment in absentia.
The court however granted bail to Shah Alam in three graft cases filed by Anti-Corruption Commission (ACC).
Judge (in-charge) Kader Newaz of the Special Judge Court-3 passed the order after Shah Alam surrendered before it and sought bail in the cases.
On September 30, 2007, an anti-graft tribunal handed down eight-year imprisonment to Shaha Alam for dodging tax.
Kabiruddin Mollah, deputy tax commissioner of Circle-8 of the National Board of Revenue (NBR), filed the case against Shah Alam in connection with evading Tk 8.48 crore income tax between the fiscal years 2004 and 2007.

Saturday, 19 March 2011

mahmodur rahman

বিএফইউজের কাউন্সিলে মাহমুদুর রহমান : মানবাধিকার মাতৃভূমি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্যই সাংবাদিকদের লড়াই : আল মাহমুদ পিতার হাতে : আমি কন্যার হাতে নির্যাতিত

স্টাফ রিপোর্টার
কারামুক্ত আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মানবাধিকার রক্ষা, মাতৃভূমির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অটুট রাখা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে আরও বৃহত্তর লড়াই সংগ্রামের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাকে কারাগার থেকে জীবিত ফেরত দেয়ার কোনো ইচ্ছা এই ফ্যাসিবাদী সরকারের ছিল না। আধিপত্যবাদবিরোধী জনগণের আন্দোলনের মুখেই আমি মুক্ত হয়ে আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি। আপনাদের এ লড়াই একজন ব্যক্তির মুক্তির জন্য ছিল না। এটা ছিল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার জন্য লড়াই। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, দেশের স্বার্থে, মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে কোনো আপস করবেন না। সাংবাদিকদের কোনো দল নেই, আপনারা দাঁড়িয়ে যান, ঐক্যবদ্ধ হন। তাহলে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের সব চেষ্টা ব্যর্থ হবে।
গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কবি আল মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যম এখন কঠিন সময় পার করছে। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে। তিনি বলেন, জনগণের বাকস্বাধীনতা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নির্ভর করে। এজন্যই জনগণের মুক্তির জন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
কারামুক্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, কাকতালীয়ভাবে কবি আল মাহমুদের সঙ্গে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছি। শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে তত্কালীন গণকণ্ঠ সম্পাদক ও দেশের বর্তমানে শ্রেষ্ঠতম কবি আল মাহমুদের কারাবরণ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আল মাহমুদ পিতার হাতে নির্যাতিত হয়েছিলেন, আর কন্যার হাতে নির্যাতিত হয়েছি আমি। আমার ওপর নির্যাতন একটু বেশি-ই হয়েছে। কেননা, কন্যা নির্যাতনে একটু বেশি বিশ্বাস করেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, আজকের গণমাধ্যম বিপদের সম্মুখীন। সরকারের রোষানলের বাইরেও বিপদ আসছে। আদালতের মাধ্যমেও সাংবাদিক কলামিস্টদের অসম্মানিত করা হচ্ছে। সংবিধানে মানবাধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘কোনো নাগরিকের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করা যাবে না’। তাহলে আদালত যে নাগরিকদের অসম্মানিত করছেন, এজন্য আদালতের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ আনতে হবে। তিনি বলেন, আদালতের আচরণ সংবাদপত্রের জন্য অনুকূল নয়। এই বিপদ থেকে গণমাধ্যমকে রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধভাবে আদর্শের সঙ্গে লড়তে হবে। কারণ, আদর্শের শক্তি বড় শক্তি। সত্যের শক্তি বড় শক্তি। সাংবাদিক ভাইবোনদের বলার সময় এসেছে—আমরা সত্যের পক্ষে দাঁড়ালাম।
মাহমুদুর রহমান বলেন, অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন দেশে সংবিধান আছে কিনা। আমার প্রশ্ন—দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কতটুকু আছে? ট্রানজিট দিয়ে বিনাশুল্কে ভারতের মালামাল পরিবহন করতে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে এভাবে বহু রাস্তা করে ভারতীয় মালামাল ভবিষ্যতে পরিবহন করতে দেয়া হবে। তাদের পরিকল্পনা হলো বাংলাদেশকে খণ্ডবিখণ্ড করা। ভারতের ব্যবহারের রাস্তাঘাট বানানোর জন্যই কি ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন, মা-বোন ইজ্জত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন? মাহমুদুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে দেশের স্বাধীনতা বিক্রি করছে। বাংলাদেশকে বাফার স্টেট করার উদ্যোগকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে হবে। তিনি বলেন, ১০ টাকা কেজির চাল খাওয়ানোর গল্প আর ভারতকে ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে—এ দুয়ের মধ্যে কোনটি বড় মিথ্যাচার সে প্রশ্ন আজ দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আর্মি রুল যে অত্যাচার করে তা জনগণের মোটামুটি জানা। তবে গণতন্ত্রের মুখোশে যে নির্যাতন হয় তা আরও ভয়াবহ। এ থেকে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। ইতিহাস তাই বলে। পাশাপাশি এও মনে রাখতে হবে, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ৮৫ বছর বয়সে যদি চিলির পিনোসেটের বিচার হতে পারে, তবে ভবিষ্যতে একদিন হয়তো গণতন্ত্রের লেবাসধারী বর্তমান সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিচার হতে পারে।
বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন সংগঠনটির মহাসচিব এমএ আজিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস শহীদ, সাংবাদিক নেতা এএসএম কাদের, মির্জা সেলিম রেজা, মোস্তফা নঈম, আতাহার ইকবাল, হাসান আহমেদ, মনিরুল ইসলাম মন্টু, রুহুল আমীন রোকন প্রমুখ। উপস্থিত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ ও খন্দকার মনিরুল আলম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন ও যুগ্ম সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, বিএফইউজে’র দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে আজ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এতে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন রুহুল আমিন গাজী ও শওকত মাহমুদ এবং অন্যটি খন্দকার মনিরুল আলম ও এমএ আজিজ।
বিএফইউজে কাউন্সিলে সাড়ে ৯ মাস কারাভোগী সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, সত্য লেখার জন্য আমাকে যে মূল্য দিতে হয়েছে সে মূল্য আর কে দিয়েছে। তিনি বলেন, মামলার শুনানির সময় আদালতে বলা হয়েছে ট্রুথ ইজ নো ডিফেন্স। কিন্তু আমি বলেছি আমি যে আদালত বিশ্বাস করি সেখানে ট্রুথই বড় ডিফেন্স। সত্যের কাছে মিথ্যা সব সময়ই পরাজিত। সত্যের পক্ষে লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় শক্তিশালী হাতিয়ার একটি সংবাদপত্র। এ মুহূর্তে ‘আমার দেশ’ পত্রিকা ছাড়া আমার আর কোনো পরিচয় নেই। আমি শতভাগ আপনাদের মানুষ। আপনাদেরই প্রতিনিধিত্ব করছি। স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইকে বেগবান করতে ও ‘আমার দেশ’কে বাঁচিয়ে রাখতে আমি জেলে থাকাকালে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর্টিজান সিরামিক বিক্রি করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাকে গ্রেফতারের কারণ ছিল ব্যক্তিগতভাবে শায়েস্তা করা ও অন্যদের শিক্ষা দেয়া যে, তোমরা সরকারের সঙ্গে লাগতে এসো না। তাহলে মাহমুদুর রহমানের মতো অবস্থা হবে। এ থেকে অনেকে শিক্ষাও নিয়েছে। সবচেয়ে বেশি শিখেছে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো। তারা এখন আর লাইভ টকশো প্রচার করে না। তিনি বলেন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা দাঁড়িয়ে যান, ঐক্যবদ্ধ হোন। মালিকরাও বাধ্য হবেন। আপনাদের ছাড়া মালিকরা চলতে পারবে না। তাই আপনারা এক হয়ে সরকারের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে মাহমুদুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের এক বছরের সমান টাকা লোপাট হয়ে গেছে। আইএমএফ বলেছে, যদি লোপাট হয়ে থাকে তাহলে বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সভাপতির বক্তব্যে রুহুল আমিন গাজী বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য অবিরাম লড়াই চলবে। সরকার বলেন, বিচার বিভাগ বলেন, কেউ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করলে সাংবাদিক সমাজ বসে থাকবে না। এসব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা যে লড়াই সংগ্রাম শুরু করেছে ভবিষ্যতে তা আরও বেগবান হবে।
এমএ আজিজ বলেন, এ সরকার শুরু থেকেই গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরেছে। সরকারি নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমরা রাজপথে আছি। তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে ৮ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। নির্যাতনের শিকার ৮শ’ সাংবাদিক।
কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, দেশে এখন সংবিধান আছে কিনা এটাই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ভয়াবহতা অত্যন্ত কঠিন। দেশের মানুষ অস্থির হয়ে উঠেছে। সংবাদপত্র শিল্পে অস্থিরতা চলছে। সামনে আরও বন্ধুর পথ। এজন্য সাংবাদিকদের সুস্থির নেতৃত্ব দরকার।
সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে এলেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ, সাংবাদিক নির্যাতন এবং চাকরিচ্যুতি করা হয়। মাহমুদুর রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ সরকার তাকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে সাড়ে ৯ মাস জেলে বন্দি করে রাখে। তার ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। এমন নির্যাতন নেই যা তার উপর চালানো হয়নি। আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। তবে তার মুক্তি এমনিতেই হয়নি। মাহমুদুর রহমানের মুক্তি আন্দোলন ধীরে ধীরে সরকার পতন আন্দোলনের দিকে ধাবিত হওয়ায় সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে।
আবদুস শহীদ বলেন, বর্তমান সরকার বাসস, বিটিভিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ভিন্নমতের সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করেছে। আমার দেশ বন্ধ করে দিয়ে, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে সাংবাদিকদের মধ্যে ভীতিসঞ্চারের চেষ্টা করেছে। কিন্তু ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে সাংবাদিক সমাজ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাবে।

BANGGA BANDO NOT DECLARD FRIDOM

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি—০১

সৈয়দ আবদাল আহমদ
একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে গ্রেফতারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বাধীনতার কোনো ঘোষণা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেননি। তাজউদ্দীন আহমদ ওই রাতেই স্বাধীনতার ঘোষণার ছোট্ট একটি খসড়া তৈরি করে টেপরেকর্ডারে ধারণ করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে পড়তে দেন। বঙ্গবন্ধু খসড়াটি পড়ে নিরুত্তর থাকেন এবং এড়িয়ে যান। তাজউদ্দীন আহমদ ঘোষণাটি দিতে অনুরোধ জানালে বঙ্গবন্ধু উত্তর দেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে একটি দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে।’ ইপিআর সিগন্যালসের মাধ্যমে শেখ সাহেব স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন সেটাও বোধহয় অবাস্তব কথা। চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন বলে যে কথা বলা হয়, তাও সঠিক নয়। ভারত সরকার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার সময় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও অন্য প্রধান নেতাদের জিজ্ঞাসা করেছে যে, স্বাধীনতার ঘোষণার ব্যাপারে শেখ মুজিবুর রহমান কাউকে কিছু বলে গেছেন কিনা। এর মধ্যে জহুর আহমদ চৌধুরীও ছিলেন। ভারত সরকারকে প্রত্যেকেই বলেছেন, কাউকেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণার কথা বলে যাননি। জহুর আহমদ চৌধুরী নিজে তাজউদ্দীনকে বলেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণার ব্যাপারে তাকে কিছুই বলা হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে খন্দকার, মঈদুল হাসান ও এস আর মীর্জার কথোপকথন নিয়ে প্রথমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন’ শীর্ষক বইয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এই ঐতিহাসিক তথ্য স্থান পেয়েছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ কে খন্দকার ছিলেন মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান সেনাপতি, বর্তমানে তিনি সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী এবং সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি। মঈদুল হাসান ছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও মূলধারা ’৭১ গ্রন্থের লেখক এবং এস আর মীর্জা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গঠিত যুবশিবিরের মহাপরিচালক।
তিন বীর মুক্তিযোদ্ধার কথোপকথনে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টিও বিস্তারিতভাবে স্থান পেয়েছে। এ কে খোন্দকার বলেন, রেডিও কর্মীদের প্রচেষ্টায় ২৬ মার্চ দুপুর ২টার সময় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। ২৭ মার্চ সন্ধ্যার কিছু আগে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। অবশ্য মেজর জিয়া কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে এসে প্রথমেই যে ঘোষণাটি দেন, সেটি ভুলভাবে দেন। সেই ঘোষণায় তিনি নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছিলেন। ২৬ মার্চ দুপুরে স্বাধীনতার ঘোষণা এম এ হান্নান সাহেব যেটা পড়েছিলেন এবং ২৭ মার্চ সন্ধ্যার দিকে মেজর জিয়া যেটা পড়েন, তার মধ্যে কিন্তু একটা পার্থক্য ছিল। ২৬ মার্চেরটা অনেকে শুনতে পাননি। অন্যদিকে যুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীর একজন বাঙালি মেজরের কথা শোনা সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার। আমি নিজে জানি, যুদ্ধের সময় জানি, যুদ্ধের পরবর্তী সময়ও জানি যে, মেজর জিয়ার এ ঘোষণাটি পড়ার ফলে সারাদেশের ভেতরে এবং সীমান্তে যত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাদের মধ্যে এবং সাধারণ মানুষের মনে সাংঘাতিক একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করল যে, হ্যাঁ, এবার বাংলাদেশ একটা যুদ্ধে নামলো। জিয়ার ২৭ মার্চ ঘোষণা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে যারা ছিল, তাদের মধ্যে যে একটা প্রচণ্ড উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়, সে সম্পর্কে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়।
মঈদুল হাসান বলেন, অন্যের কথা কী বলব, মেজর জিয়ার বেতার ঘোষণা শুনে আমি নিজে মনে করেছিলাম যে, না, সত্যি তাহলে সামরিক বাহিনীর বিপুল সংখ্যক লোক বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। এটা আমার মনে বিরাট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং আমি উত্সাহিত বোধ করি। আমি আশপাশে যাদের চিনতাম, তারাও এই ঘোষণায় উত্সাহিত হন। সুতরাং জিয়ার সেই সময়টুকুর সেই অবদান খাটো করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
এস আর মীর্জা বলেন, ২৫ মার্চের পর আমি সবসময় রেডিও সঙ্গে রেখেছিলাম। এম এ হান্নান সাহেবের ঘোষণাটি আমি শুনিনি। ২৭ মার্চ বিকালে পরিষ্কার শুনলাম, বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। এই ঘোষণা শুনে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম এই ভেবে যে, হ্যাঁ, এখন মানুষ স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কারণ, তাদের সঙ্গে বাঙালি সেনারাও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে। শেখ মুজিব যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন এ নিয়ে কোনো কথা কেউ উত্থাপন করেননি বা বিতর্ক হয়নি। এমনকি জিয়াউর রহমানের শাসনকালেও এ ব্যাপারে কথা ওঠেনি। এটা শুরু হলো সম্ভবত ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর কয়েক বছর পর। ১৯৯১ সালে বিএনপি নতুন করে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ জিয়াকে খাটো করার চেষ্টা করে। এরপর থেকেই বিবাদটা প্রকট আকার ধারণ করে।
তিন বীর মুক্তিযোদ্ধার কথোপকথন হুবহু নিচে দেয়া হলো :
মঈদুল হাসান : বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে, এ সম্পর্কে আমরা আলোচনা করতে পারি।
এ কে খোন্দকার : আসলে, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে কোনো রকম আলোচনা কিংবা দ্বিমত কিংবা বিভাজন মুক্তিযুদ্ধের সময় কিন্তু ছিল না। এটা শুরু হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে। ২৫ মার্চ রাতে যখন পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের আক্রমণ করল, সেই রাতেই শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে গ্রেফতার করা হয়। তাহলে কথা হচ্ছে, স্বাধীনতার ঘোষণাটা কীভাবে এলো? ২৬ মার্চ তারিখে সারাদেশেই সান্ধ্য আইন ছিল। চট্টগ্রামে সেই সান্ধ্য আইনের মধ্যেও সেখানকার বেতার কেন্দ্রে কিছু বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে কয়েকজনের নাম আমার মনে আছে—তখন তাঁদের ঠিক কার কী পদ ছিল এখন আমার মনে নেই। তাঁরা মিলিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন যে কিছু না কিছু বেতারে বলা দরকার। তখন তাঁরা সবাই মিলে একটা স্বাধীনতার ঘোষণার খসড়া তৈরি করলেন এবং সেই খসড়াটি তাঁরা ২৬ মার্চ দুপুর দুইটার সময় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে গিয়ে নিজেরা তা চালু করে প্রচার করেন। সেই ঘোষণা চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান পাঠ করেন। ধারণ করা এই ভাষণ সেদিন পুনরায় সাড়ে চারটা-পাঁচটার দিকে প্রচার করা হয়। তাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়েছে—এমন কথাগুলো ছিল।
এদিকে বেতার কেন্দ্রটি খোলা হয়েছে এবং কার্যক্রম চালু হয়েছে, সুতরাং এটাকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা ছিল। এ অবস্থায় তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, মেজর জিয়া নামের একজন ঊর্ধ্বতন বাঙালি সামরিক কর্মকর্তা অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অন্যান্য কর্মকর্তা ও সৈনিকসহ পটিয়ায় রয়েছেন।
তখন ২৭ মার্চ তারিখে সকাল ১০টার দিকে এইসব বেতারকর্মী পটিয়ায় যান। তাঁরা সেখানে গিয়ে যে আলোচনা শুরু করেন, তাতে কিন্তু ঘোষণার কোনো বিষয় ছিল না। তাঁরা সেখানে গিয়েছিলেন বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তার প্রশ্নে কথা বলতে। তাঁরা মেজর জিয়াকে বেতার কেন্দ্র রক্ষার জন্য কিছু বাঙালি সেনাসদস্য দিয়ে সাহায্য করার অনুরোধ জানান। মেজর জিয়া সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যাপারে সম্মতি দেন এবং বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি আমার সৈনিক দিয়ে সাহায্য করব।’ এরপর হঠাত্ তাঁদের কারও একজনের মনে হলো যে, যদি এই ঘোষণাটি একজন সেনা কর্মকর্তাকে দিয়ে বেতারে বলানো যায়, তাহলে এর একটা প্রভাব সারাদেশে ভালোভাবে পড়বে। এই চিন্তা থেকেই মেজর জিয়াকে অনুরোধ করা হয়, তিনি এই ঘোষণাটি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে পড়তে রাজি আছেন কিনা। আমি পরে শুনেছি, চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এম আর সিদ্দিকী তখন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং এম এ হান্নান সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মেজর জিয়াকে প্রস্তাব দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি রাজি হন এবং বেশ আগ্রহের সঙ্গেই রাজি হন। মেজর জিয়া কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে এসে প্রথম যে ঘোষণাটি দিলেন, সেটা ভুলভাবেই দিলেন। সেই ঘোষণায় তিনি নিজেকেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। এই ঘোষণায় সবাই হতবাক হয়ে যান। এমন ঘোষণা তো তাঁর দেয়ার কথা নয়! এরপর তা সংশোধন করা হয়। ঘোষণা আগে থেকেই যেটি তৈরি ছিল, সেটি আবার জিয়ার কণ্ঠে টেপে ধারণ করা হয় এবং সেটি জিয়া পড়েন ২৭ মার্চ সন্ধ্যার কিছু আগে। এভাবে বঙ্গবন্ধুর নামে এই ঘোষণাটি ২৬ মার্চ দুপুর দুইটা-আড়াইটার দিকে প্রথম পড়া হয় এবং সেদিন বিকাল চারটা-সাড়ে চারটায় তা পুনরায় প্রচার করা হয়। আর ২৭ মার্চ সন্ধ্যার কিছু আগে জিয়ার কণ্ঠে প্রথম ঘোষণা হয়। এটি হচ্ছে প্রকৃত সত্য ঘটনা।
মঈদুল হাসান : ২৫ মার্চ সন্ধ্যাবেলা, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যখন চলে যান এ দেশ থেকে, তখন একটা চরম সঙ্কটপূর্ণ অবস্থার মতো হয়। সবাই ভাবতে থাকেন, তাহলে এখন কী করণীয়। এসময় তাজউদ্দীন আহমদসহ আরও কিছু নেতা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে, অর্থাত্ শেখ মুজিবের বাড়িতে সমবেত ছিলেন। সেখানে এক ফাঁকে তাজউদ্দীন আহমদ একটি টেপরেকর্ডার এবং ছোট্ট একটা খসড়া ঘোষণা শেখ সাহেবকে দিয়ে সেটা তাকে পড়তে বলেন। এ ঘটনা তাজউদ্দীন আহমদের কাছ থেকে আমার শোনা। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই আমি যখন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি, তখন তাজউদ্দীন আহমদকে এ ব্যাপারে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম। ঘোষণাটা তাজউদ্দীন আহমদের নিজের লেখা। লেখাটা ছিল এমন—পাকিস্তানি সেনারা আমাদের আক্রমণ করেছে অতর্কিতভাবে। তারা সর্বত্র দমননীতি শুরু করেছে। এ অবস্থায় আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এবং আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলাম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে। এই খসড়া ঘোষণাটা শেখ মুজিবুর রহমানকে দেয়ার পর সেটা তিনি পড়লেন। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কিছুই বললেন না, নিরুত্তর রইলেন। অনেকটা এড়িয়ে গেলেন।
তাজউদ্দীন আহমদের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি যখন তাকে বললেন, ‘মুজিব ভাই, এটা আপনাকে বলে যেতেই হবে; কেননা কালকে কী হবে, আমাদের সবাইকে যদি গ্রেফতার করে নিয়ে যায়, তাহলে কেউ জানবে না কী তাদের করতে হবে। এ ঘোষণা কোনো না কোনো জায়গা থেকে কপি করে আমরা জানাব। যদি বেতার মারফত কিছু করা যায়, তাহলে সেটাই করা হবে।’ শেখ সাহেব তখন উত্তর দিয়েছিলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে একটা দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে।’ এ কথার পিঠে তাজউদ্দীন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে সঙ্গে সঙ্গে রাত সম্ভবত ৯টার পরপরই ৩২ নম্বর ছেড়ে চলে যান।
পরবর্তীতে এ ব্যাপারে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা আবদুল মোমিনকে। তিনি ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তখন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। আবদুল মোমিন আমাকে বলেন, তিনি যখন ৩২ নম্বরে যান, তখন দেখেন যে তাজউদ্দীন আহমদ খুব রেগে ফাইলপত্র বগলে নিয়ে সেখান থেকে চলে যাচ্ছেন। ফাইলগুলো তিনি সব সময় সঙ্গেই রাখতেন। ঘোষণা, পরিকল্পনা এবং অন্য জরুরি কিছু কাগজপত্র এর মধ্যে থাকত। তিনি যেখানেই যেতেন, সেটা সঙ্গে নিয়ে যেতেন, কাছছাড়া করতেন না। তিনি যখন রেগে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখন ৩২ নম্বর বাড়ির দরজার বাইরে তাজউদ্দীনের হাত ধরে আবদুল মোমিন বললেন, ‘তুমি রেগে চলে যাও কেন।’ তখন তাজউদ্দীন তার কাছে ঘটনার বর্ণনা করে বললেন, ‘বঙ্গবন্ধু এইটুকু ঝুঁকি নিতেও রাজি নন। অথচ আমাদের ওপর একটা আঘাত বা আক্রমণ আসছেই।’
এরপর ৩২ নম্বর থেকে তাজউদ্দীন তার বাড়িতে ফিরে যান। রাত ১০টার পর কামাল হোসেন ও আমীর-উল-ইসলাম যান শেখ সাহেবের বাড়িতে। শেখ সাহেব তাদের তত্ক্ষণাত্ সরে যেতে বলেন। শেখ সাহেব নিজে কী করবেন, সেটা তাদের বলেননি। সেখান থেকে তারা দু’জন যখন তাজউদ্দীন আহমদের বাড়িতে গেলেন, তখন রাত বোধহয় ১১টার মতো হয়ে গেছে। সে সময় পাকিস্তানিদের আক্রমণ শুরু হতে যাচ্ছে। ওখানে তারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলেন, তাজউদ্দীনকে নিয়ে তারা দু’জন অন্য কোথাও যাবেন।
যাই হোক, ওই ঘোষণার খসড়া তাজউদ্দীন আহমদ ২৫ মার্চের কয়েক দিন আগেই তৈরি করে রেখেছিলেন এ জন্য যে, এমন একটা অনিশ্চিত বা আকস্মিক অবস্থা হতে পারে। তার কথা, আমি আমার ডাইরিতে টুকে রেখেছিলাম ১৯৭২ সালেই। তিনি বলেন, ‘আমীর-উল ইসলাম ও কামাল হোসেন যখন এসে বলল যে, বাড়ি থেকে এখনই সরে যাওয়া দরকার, তখন আমি তাদের বলিনি; তবে আমার মনে হয়েছিল আমার কোথাও যাওয়া উচিত নয়।’ তাজউদ্দীন আহমদ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘যেখানে আন্দোলনের সর্বোচ্চ নেতা—যাকে এতবার করে বলেছি, আজকে সন্ধ্যাতেও বলেছি, তিনি কোথাও যেতে চাইলেন না এবং তাকে স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য যে সংক্ষিপ্ত একটা ঘোষণা বা বার্তা টেপরেকর্ডে ধারণ বা ওই কাগজে স্বাক্ষর করার জন্য বলায় তিনি বললেন, এটাতে পাকিস্তানিরা তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করতে পারবে! তিনি এতটুকুও যখন করতে রাজি নন, তখন এ আন্দোলনের কি-ই বা ভবিষ্যত্?’ এদিকে আমীর-উল ইসলামদের সঙ্গে আলাপ শেষ না হতেই চারদিকের নানা শব্দ থেকে বোঝা গেল যে, পাকিস্তানি সৈন্যরা সেনানিবাস থেকে বের হয়ে আক্রমণ শুরু করেছে। তারপর তারা তিনজন বেরিয়ে পড়লেন। কামাল হোসেন গেলেন ধানমন্ডি ১৪ নম্বরের দিকে এক অজ্ঞাত উদ্দেশ্যে। অন্যদিকে আমীর-উল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে তাজউদ্দীন যান লালমাটিয়ায়।

পুতুলের দাদাশ্বশুর রাজাকার হলেও যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না : দেশে কোনো রাজাকার নেই : ফরিদপুর আ’লীগ নেতাদের শেখ হাসিনা

পুতুলের দাদাশ্বশুর রাজাকার হলেও যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না : দেশে কোনো রাজাকার নেই : ফরিদপুর আ’লীগ নেতাদের শেখ হাসিনা

আরিফ ইসলাম, ফরিদপুর
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কড়া ভাষায় বলেছেন, দেশে রাজাকার বলে কোনো শব্দ নেই। দেশে কোনো রাজাকার নেই। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের দাদাশ্বশুর ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রয়াত খন্দকার নূরুল হোসেন নূরু মিয়া ফরিদপুরে রাজাকারদের তালিকার ১৪ নম্বর রাজাকার হলেও তিনি যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না বলে শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি ফরিদপুরের নেতাদের কাছে প্রশ্ন করেছেন, তার ভাই শেখ সেলিম ফরিদপুরের রাজাকার মুসা বিন শমসের ওরফে নূইলা মুসার সঙ্গে ছেলে বিয়ে দিয়ে আত্মীয়তা করেছেন—এটা কেন তারা কখনও বলেন না; অথচ শেখ হাসিনার মেয়ের দাদাশ্বশুর নূরু মিয়ার নামে সবাই অভিযোগ করেন যে, তিনি রাজাকার ছিলেন। নূরু মিয়া পিস কমিটির সদস্য থাকলেও যুদ্ধের সময় তিনি কোনো অপরাধমূলক কাজকর্ম করেননি বলে শেখ হাসিনা গর্বের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের মনে করিয়ে দেন।
গত নির্বাচনে শেখ হাসিনার বেয়াই ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ফরিদপুর সদর আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর মন্ত্রিত্ব পান। এই শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও তার ছোট ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ জানানোর জন্য সোমবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নির্যাতিত নেতাদের যে বৈঠকের আয়োজন করা হয়, সেখানে আওয়ামী লীগ প্রধান এসব কথা বলেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। সন্ধ্যা সোয়া ৭টা থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফরিদপুর আওয়ামী লীগ নেতাদের ওই বৈঠক রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত চলে। তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার বেয়াই মোশাররফ হোসেন ও বেয়াইর ছোট ভাই বাবরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে জেলা নেতাদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জায়নুল আবেদিন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সদস্য বাবু বিপুল ঘোষ, জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ও ফরিদপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যন অ্যাডভোকেট সামছুল হক ভোলা মাস্টার, জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ও যুদ্ধকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার সাব-সেক্টর কমান্ডার নূর মোঃ বাবুল, ফরিদপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান অমিতাভ বোস, মাহবুবুর রহমান খান, মনিরুল হাসান মিঠু, আবদুর রহমান প্রমুখ। উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুল হক ভোলা মাস্টার প্রধানমন্ত্রীকে শ্রমমন্ত্রী ও তার ভাই বাবরের নির্যাতনের কাহিনী এবং তাদের বিভিন্ন অপকর্মের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, শ্রমমন্ত্রীর বাবা নূরু মিয়া একজন রাজাকার ছিলেন। ফরিদপুরের রাজাকারদের তালিকায় তার অবস্থান ১৪ নম্বরে। ছেলে মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে রাজাকার বাবা নূরু মিয়ার নামে ফরিদপুরের বিভিন্ন রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। রাজাকারের নামকরণ করা রাস্তা ভেঙে ফেলার জন্য ভোলা মাস্টার দাবি জানান। বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতা নূর মোঃ বাবুল বলেন, আমি আপনার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হয়েছি। সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। অথচ আজ ৭৭ বছর বয়সে আমাকে কুপিয়ে আহত করা হলো। আমার শরীর থেকে রক্ত ঝরানো হলো। এই সন্ত্রাসী হামলার জন্য তিনি শ্রমমন্ত্রী ও তার ভাই বাবরকে দায়ী করেন। শ্রমমন্ত্রীর গ্রুপের সন্ত্রাসীদের হাতে আহত জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ আহ্বায়ক শওকত আলী জাহিদের ভাই আবদুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য তাদের পরিবার সারা জীবন যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, তার প্রতিদান হিসেবে আজ তার ভাইকে একটি পা হারাতে হলো। প্রধানমন্ত্রী সবার বক্তব্য ধৈর্যসহকারে শোনেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে ফরিদপুর জেলা নেতাদের বলেন, আত্মীয়তার চেয়ে আমার কাছে দল অনেক বড়। তাই দলের ক্ষতি করে আমি কাউকে কিছু করতে দেব না। কারও বাসাবাড়িতে নয়, রাজনীতি হবে আওয়ামী লীগের অফিসে বসে। শওকত আলী জাহিদ এবং নূর মোঃ বাবুলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার আসামিদের ধরা হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক উপস্থিত ছিলেন।

আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল রাজাকার পরিবারের সদস্য : একাত্তরে বড় ভাইয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন

আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল রাজাকার পরিবারের সদস্য : একাত্তরে বড় ভাইয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন

এমএ নোমান ও রাকিব হোসেন
আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম রাজাকার পরিবারের সদস্য। এ অভিযোগ সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, তার বড় ভাই হাকিম হাফেজ আজিজুল ইসলাম নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ছিলেন। পাক হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য তার নেতৃত্বেই ঢাকায় প্রথম শান্তি কমিটি গঠিত হয়। একই সঙ্গে তিনি রাজাকার, আল বদর ও আল শামস বাহিনীর সঙ্গে লিয়াজোঁ রক্ষা করতেন। অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসই স্বাধীনতাবিরোধী কাজে বড় ভাইকে সার্বিক সহযোগিতা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় তার রাজাকার ভাইয়ের মালিকানাধীন প্রিন্টিং প্রেসে তিনি ম্যানেজার হিসেবেও চাকরি করেন। অ্যাডভোকেট কামরুল ১৯৯৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন অ্যাডভোকেট কামরুল।
নেজামে ইসলাম পার্টি ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইউনানী চিকিত্সক ও ঢাকা তিব্বিয়া হাবিবিয়া ইউনানী কলেজের অধ্যক্ষ হাকিম খুরশিদুল ইসলামের চার ছেলে। তারা হচ্ছেন যথাক্রমে হাকিম হাফেজ আজিজুল ইসলাম, আনোয়ারুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম ও মোরশেদুল ইসলাম। ১৯৫৭ সালে হাকিম খুরশিদুল ইসলামের মৃত্যুর পর বড় ছেলে হাকিম হাফেজ আজিজুল ইসলাম এ কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পর্যায়ক্রমে তিনি এ কলেজের অধ্যক্ষ হন। একই সঙ্গে তিনি নেজামে ইসলাম পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। পরে তিনি তত্কালীন পাকিস্তান নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক হন। ১৯৬৯ সালে এ দেশে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলন জোরদার হলে নেজামে ইসলাম পার্টির পক্ষ থেকে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় প্রচারণা চালানোর জন্য ‘নেজামে ইসলাম’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। হাকিম আজিজুল ইসলাম এ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শেখ মুজিবুর রহমানসহ পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনকারীদের নিয়ে তিনি এ পত্রিকায় ‘ইবলিশের দিনলিপি’ নামে প্রতি সপ্তাহে একটি বিশেষ সম্পাদকীয় লেখেন।
মাত্র ৭ বছর বয়সে পিতাকে হারিয়ে কামরুল ইসলাম বড় ভাই হাকিম আজিজুল ইসলাম ও ভাবী ফয়জুন নেছা রানুর স্নেহাশীষে বড় হতে থাকেন। বেগম ফয়জুন নেছা অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সম্পর্কে আমার দেশকে বলেন, ১৯৬১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আমি তাদের পরিবারে আসি। এ সময় কামরুল ছিল ১০-১১ বছরের কিশোর। আমার স্বামীই তার ভাই-বোন নিয়ে ১৩-১৪ জনের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। ছোট ভাই-বোনদের পড়ালেখার খরচ জোগাতেন তিনিই। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কামরুলের বয়স ছিল ২১ বছর। ওই সময় আমরা সবাই এক বাসাতেই ছিলাম। যুদ্ধে তার স্বামী হাকিম আজিজুল ইসলাম ও দেবর অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অতকিছু বলতে পারব না এবং আমার পরিবারের বিরুদ্ধে যায়- এমন সত্য প্রকাশ উচিত হবে না। তবে এতটুকু বলতে পারি, স্বাধীনতার পরপরই বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের একজন এমপির নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী আমাদের বাসায় হামলা করে এবং আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে হামলাকারী মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের সবাইকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকিও দিয়ে যায়। এর একদিন পরেই মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা আমার স্বামীর পরিধেয় বস্ত্র ও চশমা আমার কাছে পাঠায়। পরে আমার দেবর কামরুল ইসলাম ও মামুন নামে একজন ম্যাজিস্ট্রেট বহু খোঁজাখুঁজির পর একটি পরিত্যক্ত গর্ত থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় আমার স্বামীকে উদ্ধার করেন।
পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকার ৪৮/১, আজগর লেনে অবস্থিত অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের বাড়ির আশপাশের লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কামরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাসই বড় ভাই হাকিম আজিজুল ইসলামের সঙ্গে ছিলেন। আজিজুল ইসলাম ২০০৫ সালে মারা যান। পিতা হাকিম খুরশিদুল ইসলামের রেখে যাওয়া জায়গায় তারা ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ৫ তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বর্তমানে এ বাড়িটি ইসলামী ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামকে আমি শিশুকাল থেকেই চিনি। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বড় ভাইয়ের সঙ্গেই থাকতেন এবং তার কাজে সহযোগিতা করতেন। ১৯৯৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। এর আগে ১৯৮৫ সালে এলএলবি পাস করে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ৬৪ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত পার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। এ নির্বাচনে তিনি বিএনপি প্রার্থী কামালউদ্দিন কাবুলের কাছে পরাজিত হন। মূলত এ সময় থেকেই তিনি আওয়ামী লীগ রাজনীতির পক্ষে সোচ্চার হন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-২ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সাম্প্রতিক কাজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, অতীতে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের ভূমিকা যাই থাকুক, বর্তমানে তিনি এলাকাবাসীর সুখ-দুঃখের সঙ্গী। এলাকার সব উন্নয়নমূলক কাজেই তিনি কল্পনাতীত ভূমিকা রেখে চলেছেন।
তিব্বিয়া হাবিবিয়া কলেজে হাকিম আজিজুল ইসলামের এক সময়ের সহকর্মী জানান, আজিজুল ইসলাম সাহেব ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। কলেজে যোগ দেয়ার আগে তিনি নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি প্রেস ব্যবসা করতেন এবং একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। হাকিম আজিজুল ইসলামের প্রেসেই কামরুল ইসলাম ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের মতো রাজাকারের সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনা উচিত কিনা, প্রশ্নের জবাবে হাকিম আজিজুল ইসলামের স্ত্রী ফয়জুন নেছা রানু আমার দেশকে বলেন, আমরা সবাই এদেশেরই মানুষ। সব দেশেই সব সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সবাই একমত পোষণ করে না। কেউ কেউ ভিন্নমতও পোষণ করে থাকে। ভিন্নমত পোষণ করাটা কোনো অপরাধ নয়। বরং এটা গণতান্ত্রিক অধিকার। বর্তমানে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বলে যা করা হচ্ছে তা জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। বিচারের জন্য গঠিত তদন্ত সংস্থার প্রধান আবদুল মতিন স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠায় তিনি পদত্যাগ করেছেন। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এ ধরনের অভিযোগ সরকারের অনেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে। কাজেই এখন উচিত হবে এগুলো খোঁজাখুঁজি করে জাতিকে বিভক্ত না করা। একই সঙ্গে কাঁদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে। কেননা কেউ এ দেশে গ্রিনকার্ডধারী নন। ইচ্ছা করলেই কাউকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা যাবে না। দেশ গঠনে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
এ বিষয়ে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আমার দেশকে তিনি বলেন, আমার ভাই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেননি। তিনি রাজাকার কিংবা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী ছিলেন—এ ধরনের কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধে তার নিজের ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ)-এর প্রথম ব্যাচের সদস্য হিসেবে আমি ভারতের দেরাদুন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আমাদের ওই ব্যাচে হাসানুল হক ইনু, আফম মাহবুবুল হক ও শরীফ নুরুল আম্বিয়াসহ অনেকেই ছিলেন। কাজেই আমার ব্যাপারে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা ঠিক নয়।

wel come nrbux

NRBUX