vcBux

Saturday, 19 March 2011

mahmodur rahman

বিএফইউজের কাউন্সিলে মাহমুদুর রহমান : মানবাধিকার মাতৃভূমি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্যই সাংবাদিকদের লড়াই : আল মাহমুদ পিতার হাতে : আমি কন্যার হাতে নির্যাতিত

স্টাফ রিপোর্টার
কারামুক্ত আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মানবাধিকার রক্ষা, মাতৃভূমির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অটুট রাখা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে আরও বৃহত্তর লড়াই সংগ্রামের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাকে কারাগার থেকে জীবিত ফেরত দেয়ার কোনো ইচ্ছা এই ফ্যাসিবাদী সরকারের ছিল না। আধিপত্যবাদবিরোধী জনগণের আন্দোলনের মুখেই আমি মুক্ত হয়ে আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি। আপনাদের এ লড়াই একজন ব্যক্তির মুক্তির জন্য ছিল না। এটা ছিল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার জন্য লড়াই। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, দেশের স্বার্থে, মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে কোনো আপস করবেন না। সাংবাদিকদের কোনো দল নেই, আপনারা দাঁড়িয়ে যান, ঐক্যবদ্ধ হন। তাহলে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের সব চেষ্টা ব্যর্থ হবে।
গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কবি আল মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যম এখন কঠিন সময় পার করছে। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে। তিনি বলেন, জনগণের বাকস্বাধীনতা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নির্ভর করে। এজন্যই জনগণের মুক্তির জন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
কারামুক্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, কাকতালীয়ভাবে কবি আল মাহমুদের সঙ্গে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছি। শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে তত্কালীন গণকণ্ঠ সম্পাদক ও দেশের বর্তমানে শ্রেষ্ঠতম কবি আল মাহমুদের কারাবরণ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আল মাহমুদ পিতার হাতে নির্যাতিত হয়েছিলেন, আর কন্যার হাতে নির্যাতিত হয়েছি আমি। আমার ওপর নির্যাতন একটু বেশি-ই হয়েছে। কেননা, কন্যা নির্যাতনে একটু বেশি বিশ্বাস করেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, আজকের গণমাধ্যম বিপদের সম্মুখীন। সরকারের রোষানলের বাইরেও বিপদ আসছে। আদালতের মাধ্যমেও সাংবাদিক কলামিস্টদের অসম্মানিত করা হচ্ছে। সংবিধানে মানবাধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘কোনো নাগরিকের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করা যাবে না’। তাহলে আদালত যে নাগরিকদের অসম্মানিত করছেন, এজন্য আদালতের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ আনতে হবে। তিনি বলেন, আদালতের আচরণ সংবাদপত্রের জন্য অনুকূল নয়। এই বিপদ থেকে গণমাধ্যমকে রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধভাবে আদর্শের সঙ্গে লড়তে হবে। কারণ, আদর্শের শক্তি বড় শক্তি। সত্যের শক্তি বড় শক্তি। সাংবাদিক ভাইবোনদের বলার সময় এসেছে—আমরা সত্যের পক্ষে দাঁড়ালাম।
মাহমুদুর রহমান বলেন, অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন দেশে সংবিধান আছে কিনা। আমার প্রশ্ন—দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কতটুকু আছে? ট্রানজিট দিয়ে বিনাশুল্কে ভারতের মালামাল পরিবহন করতে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে এভাবে বহু রাস্তা করে ভারতীয় মালামাল ভবিষ্যতে পরিবহন করতে দেয়া হবে। তাদের পরিকল্পনা হলো বাংলাদেশকে খণ্ডবিখণ্ড করা। ভারতের ব্যবহারের রাস্তাঘাট বানানোর জন্যই কি ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন, মা-বোন ইজ্জত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন? মাহমুদুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে দেশের স্বাধীনতা বিক্রি করছে। বাংলাদেশকে বাফার স্টেট করার উদ্যোগকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে হবে। তিনি বলেন, ১০ টাকা কেজির চাল খাওয়ানোর গল্প আর ভারতকে ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে—এ দুয়ের মধ্যে কোনটি বড় মিথ্যাচার সে প্রশ্ন আজ দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আর্মি রুল যে অত্যাচার করে তা জনগণের মোটামুটি জানা। তবে গণতন্ত্রের মুখোশে যে নির্যাতন হয় তা আরও ভয়াবহ। এ থেকে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। ইতিহাস তাই বলে। পাশাপাশি এও মনে রাখতে হবে, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ৮৫ বছর বয়সে যদি চিলির পিনোসেটের বিচার হতে পারে, তবে ভবিষ্যতে একদিন হয়তো গণতন্ত্রের লেবাসধারী বর্তমান সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিচার হতে পারে।
বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন সংগঠনটির মহাসচিব এমএ আজিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস শহীদ, সাংবাদিক নেতা এএসএম কাদের, মির্জা সেলিম রেজা, মোস্তফা নঈম, আতাহার ইকবাল, হাসান আহমেদ, মনিরুল ইসলাম মন্টু, রুহুল আমীন রোকন প্রমুখ। উপস্থিত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ ও খন্দকার মনিরুল আলম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন ও যুগ্ম সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, বিএফইউজে’র দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে আজ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এতে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন রুহুল আমিন গাজী ও শওকত মাহমুদ এবং অন্যটি খন্দকার মনিরুল আলম ও এমএ আজিজ।
বিএফইউজে কাউন্সিলে সাড়ে ৯ মাস কারাভোগী সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, সত্য লেখার জন্য আমাকে যে মূল্য দিতে হয়েছে সে মূল্য আর কে দিয়েছে। তিনি বলেন, মামলার শুনানির সময় আদালতে বলা হয়েছে ট্রুথ ইজ নো ডিফেন্স। কিন্তু আমি বলেছি আমি যে আদালত বিশ্বাস করি সেখানে ট্রুথই বড় ডিফেন্স। সত্যের কাছে মিথ্যা সব সময়ই পরাজিত। সত্যের পক্ষে লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় শক্তিশালী হাতিয়ার একটি সংবাদপত্র। এ মুহূর্তে ‘আমার দেশ’ পত্রিকা ছাড়া আমার আর কোনো পরিচয় নেই। আমি শতভাগ আপনাদের মানুষ। আপনাদেরই প্রতিনিধিত্ব করছি। স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইকে বেগবান করতে ও ‘আমার দেশ’কে বাঁচিয়ে রাখতে আমি জেলে থাকাকালে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর্টিজান সিরামিক বিক্রি করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাকে গ্রেফতারের কারণ ছিল ব্যক্তিগতভাবে শায়েস্তা করা ও অন্যদের শিক্ষা দেয়া যে, তোমরা সরকারের সঙ্গে লাগতে এসো না। তাহলে মাহমুদুর রহমানের মতো অবস্থা হবে। এ থেকে অনেকে শিক্ষাও নিয়েছে। সবচেয়ে বেশি শিখেছে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো। তারা এখন আর লাইভ টকশো প্রচার করে না। তিনি বলেন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা দাঁড়িয়ে যান, ঐক্যবদ্ধ হোন। মালিকরাও বাধ্য হবেন। আপনাদের ছাড়া মালিকরা চলতে পারবে না। তাই আপনারা এক হয়ে সরকারের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে মাহমুদুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের এক বছরের সমান টাকা লোপাট হয়ে গেছে। আইএমএফ বলেছে, যদি লোপাট হয়ে থাকে তাহলে বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সভাপতির বক্তব্যে রুহুল আমিন গাজী বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য অবিরাম লড়াই চলবে। সরকার বলেন, বিচার বিভাগ বলেন, কেউ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করলে সাংবাদিক সমাজ বসে থাকবে না। এসব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা যে লড়াই সংগ্রাম শুরু করেছে ভবিষ্যতে তা আরও বেগবান হবে।
এমএ আজিজ বলেন, এ সরকার শুরু থেকেই গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরেছে। সরকারি নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমরা রাজপথে আছি। তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে ৮ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। নির্যাতনের শিকার ৮শ’ সাংবাদিক।
কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, দেশে এখন সংবিধান আছে কিনা এটাই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ভয়াবহতা অত্যন্ত কঠিন। দেশের মানুষ অস্থির হয়ে উঠেছে। সংবাদপত্র শিল্পে অস্থিরতা চলছে। সামনে আরও বন্ধুর পথ। এজন্য সাংবাদিকদের সুস্থির নেতৃত্ব দরকার।
সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে এলেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ, সাংবাদিক নির্যাতন এবং চাকরিচ্যুতি করা হয়। মাহমুদুর রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ সরকার তাকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে সাড়ে ৯ মাস জেলে বন্দি করে রাখে। তার ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। এমন নির্যাতন নেই যা তার উপর চালানো হয়নি। আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। তবে তার মুক্তি এমনিতেই হয়নি। মাহমুদুর রহমানের মুক্তি আন্দোলন ধীরে ধীরে সরকার পতন আন্দোলনের দিকে ধাবিত হওয়ায় সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে।
আবদুস শহীদ বলেন, বর্তমান সরকার বাসস, বিটিভিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ভিন্নমতের সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করেছে। আমার দেশ বন্ধ করে দিয়ে, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে সাংবাদিকদের মধ্যে ভীতিসঞ্চারের চেষ্টা করেছে। কিন্তু ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে সাংবাদিক সমাজ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাবে।

No comments:

Post a Comment

wel come nrbux

NRBUX