vcBux

Saturday 26 March 2011

সাংবাদিক পথচারীসহ শতাধিক আহত : ১৭ কর্মী আটক : শিবিরের স্বাধীনতা শোভাযাত্রায় গুলি টিয়ারশেল লাঠিচার্জ

সাংবাদিক পথচারীসহ শতাধিক আহত : ১৭ কর্মী আটক : শিবিরের স্বাধীনতা শোভাযাত্রায় গুলি টিয়ারশেল লাঠিচার্জ

স্টাফ রিপোর্টার
গতকাল রাজধানীতে ছাত্রশিবিরের স্বাধীনতা দিবসের শোভাযাত্রায় অতর্কিত হামলা চালায় পুলিশ। শিবির কর্মীদের ওপর পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও শটগানের গুলিতে কাকরাইল-শান্তিনগর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় সাংবাদিক, পথচারীসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে ১৭ জনকে আটক করে পুলিশ। ন্যক্কারজনক এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিবির নেতারা। স্বাধীনতা দিবসের শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানে এ ধরনের হামলাকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চরম অসম্মান বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক। তিনি অবিলম্বে এ হামলার বিচার ও আটককৃতদের মুক্তি দাবি করেন।
জানা গেছে, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল সকালে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এ উপলক্ষে সকাল ৯টায় শিবির কর্মীরা কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড়ে জড়ো হতে থাকলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু শিবিরের কয়েক হাজার নেতাকর্মী এ সময় মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে এবং বড় পতাকা ও ব্যানার নিয়ে শোভাযাত্রা বের করে। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিকের বক্তব্য শেষ হওয়ার মুহূর্তে পেছন দিক থেকে হঠাত্ হামলা শুরু করে পুলিশ।
শিবির কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও শটগানের গুলি নিক্ষেপ এবং বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে। এ সময় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আতঙ্কিত শিবির কর্মী ও পথচারীরা প্রাণরক্ষায় ছোটাছুটি শুরু করে। অনেকে বিভিন্ন দোকানে আশ্রয় নেয়। কিন্তু পুলিশ সেখানে ঢুকেও তাদের লাঠিপেটা করে। পুলিশের হামলা থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিক ও পথচারীরা। এ সময় পুলিশের হামলায় দিগন্ত টিভির এক সাংবাদিকসহ শতাধিক শিবিরকর্মী আহত হয়। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ আহত ১৭ শিবির কর্মীকে অমানবিকভাবে আটক করে রমনা থানায় নিয়ে যায়। আটককৃতরা হলো আবু জায়েদ (১৮), রুহুল আমিন (২২), জাভেদ ইকবাল (২৪), শরিফুল ইসলাম (২০), মোহাম্মদ বাপ্পী (১৫), মাশরুল আহমেদ (২১), রবিউল ইসলাম (২১), আশিকুর রহমান (২২), হাফিজুর রহমান (১৮), হেলালউদ্দিন (২২), মমিনুল করিম (১৫), দেলোয়ার হোসেন (২১), সানোয়ার হোসেন তারেক (২১), আলী হোসেন (২৩), মুজাহিদুল ইসলাম (১৭), রকিব (২১) ও রফিকুল ইসলাম (১৮)। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হয়েছে। শিবির সন্দেহে এ সময় কয়েকজন হিন্দুকে আটক করা হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে রমনা থানার ওসি শিবলী নোমান সাংবাদিকদের জানান, সকাল ৯টার দিকে শিবির কর্মীরা জেলে আটক তাদের নেতা নিজামী, মুজাহিদসহ অন্যদের মুক্তির দাবিতে শান্তিনগর এলাকায় মিছিল বের করে। পুলিশ বাধা দিলে তারা গাড়ি ভাংচুর এবং কাজে বাধা দেয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ১৭ শিবির কর্মীকে আটক করে পুলিশ। তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে বেআইনি মিছিল করা, ভাংচুর, পুলিশের কাজে বাধা এবং আহত করার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। তাদেরকে দ্রুত বিচার আইনে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
শিবিরের নিন্দা ও প্রতিবাদ : স্বাধীনতা দিবসের শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা পরবর্তী সমাবেশে পুলিশের হামলা ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিবির নেতারা। এক যৌথ বিবৃতিতে শিবির সভাপতি ডা. মো. ফখরুদ্দিন মানিক ও সেক্রেটারি জেনারেল মো. দেলাওয়ার হোসেন বলেন, মহান স্বাধীনতা জাতির অহঙ্কার। স্বাধীনতা দিবসে দেশের প্রতিনিধিত্বশীল ছাত্র সংগঠন হিসেবেই শিবির বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রা পরবর্তী সমাবেশে কোনো উস্কানি ছাড়াই পুলিশের ন্যক্কারজনক হামলা ও গ্রেফতারে আমরা হতবাক। পুলিশের এ হামলার মধ্য দিয়ে সরকারের পৈশাচিক রাজনৈতিক প্রতিহিংসা প্রকাশ হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে হামলাকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসম্মান বলে তারা মন্তব্য করেন। তারা অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। শিবির নেতারা ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে আহত সাংবাদিক ও শিবির নেতাকর্মীদের দেখতে যান।
এদিকে শান্তিনগর মোড়ে শোভাযাত্রা পরবর্তী সমাবেশে শিবির সভাপতি ডা. মো. ফখরুদ্দিন মানিক বলেন, ছাত্রশিবির দেশপ্রেমিক ছাত্র সংগঠন। শিবির প্রতিনিয়ত ছাত্রসমাজকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করছে। স্বনির্ভর দেশ গড়তে স্বাধীনতার চেতনায় ছাত্র-জনতার ঐক্য তৈরিতে কাজ করছে এ সংগঠন। তিনি বলেন, ছাত্রশিবির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শিবির ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। আওয়ামী সরকারের দেশবিরোধী অপকৌশল রুখতে শিবির প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাবে।
শোভাযাত্রায় অংশ নেন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ড. মু. রেজাউল করিম, সেক্রেটারি জেনারেল মো. দেলাওয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা আতাউর রহমান সরকার, আবদুল জব্বার, সোহেল খান, নিজামুল হক নাঈম, আতিকুর রহমান, তারেকুজ্জামান, আবু সালেহ মো. ইয়াহইয়া, মাকসুদুর রহমান, মাসুদ পারভেজ রাসেল, নূরুল ইসলাম আকন্দ, আল মুত্তাকী বিল্লাহ, মাসুদুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সভাপতিসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী।

No comments:

Post a Comment

wel come nrbux

NRBUX