ছাত্রলীগের গায়ে দুটি নতুন কালো দাগ
ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার
মহাজোট শাসনামলে আওয়ামী লীগের সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের শরীরে যুক্ত দুটি কালো দাগের সঙ্গে এ নিবন্ধে সম্মানিত পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে। তবে পরিচয়পর্বের আগে সাম্প্রতিককালের ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে কিছু বলে নেয়া প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে স্বাভাবিক সময়ে আলোচনা হয় না। আলোচনা হয় অস্বাভাবিক সময়ে, দুঃসময়ে। কখন আসে দুঃসময়? দুঃসময় আসে তখন, যখন ক্যাম্পাসে লাশ পড়ে, বন্দুকযুদ্ধ হয়, হল দখল, সিট দখল, আধিপত্য বিস্তারকেন্দ্রিক সংঘর্ষ চলে, ছাত্রীহলে পুলিশ ঢোকে, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-ভর্তিবাণিজ্যের অর্থ বাটোয়ারাকেন্দ্রিক সংঘর্ষ হয়, অস্ত্র উদ্ধারের জন্য পুলিশ হল ঘেরাও করে, আর প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যকার সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। দুঃসময়ে নাগরিক সমাজ ছাত্ররাজনীতির ভালোমন্দ নিয়ে আলোচনামগ্ন হয়। তবে দুঃসময় কেটে গেলে আবার সবাই সবকিছু ভুলে যান। কিছুদিন পর পুনরায় ঘটে সংঘর্ষ; ঝরে রক্ত, পড়ে লাশ, খালি হয় মায়ের কোল। তারপর আবার আসে দুঃসময়। উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি এ দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারেনি। স্বাধীনতা-উত্তর বহুল আলোচিত সেভেন মার্ডার থেকে শুরু করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বড় বড় অঘটন ঘটার পর প্রায় প্রতিবারই এ ছক অনুযায়ী কাজ হয়। বুয়েটে সনির লাশ পড়লে সুশীল সমাজ ছাত্ররাজনীতি নিয়ে চায়ের কাপে তুফান তুললেও আবার কিছুদিন পর সে আলোচনা স্তিমিত হয়ে যায়। একাডেমিক সংবাদের চেয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পাসগুলোর রাজনৈতিক ও সাংঘর্ষিক সংবাদই গণমাধ্যমে প্রাধান্য পায়। উল্লেখ্য, শুধু ২০১০ সালে ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাঙ্গনে ৯টি লাশ পড়ে। ক্যাম্পাস থেকে চিরতরে হারিয়ে যায় আবু বকর, ফারুক, নাসিম, মহিউদ্দিন, কায়সার, আসাদুজ্জামান, রেজানুল, পলাশ প্রমুখ।
দিনবদলের স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এলেও মহাজোট সরকার আমলে ছাত্ররাজনীতি চলমান দু্ষ্টচক্র থেকে বের হতে পারেনি। এ সময়ে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের অধিকতর অবনতি হয়। চলমান চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির সঙ্গে নতুন উপসর্গ হিসেবে যুক্ত হয় বর্ধিত হারে ভর্তিবাণিজ্য। ছাত্ররাজনীতিকে ছাত্রনেতারা যেন ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করেন। ছোটখাটো ব্যবসা বা চাকরি করার চেয়ে ছাত্ররাজনীতি করাকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান মনে করে সম্প্রতি কতিপয় সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমান পেশা ছেড়ে দিয়ে দ্বিতীয় এমএ বা এমফিল ডিগ্রি করার নামে নতুনভাবে ছাত্রত্ব অর্জন করে ছাত্ররাজনীতিতে ফিরে আসেন।
সরকারি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্র সংগঠনের বাড়াবাড়ি শিক্ষাঙ্গনে পরিচিত বিষয়। এ বাড়াবাড়ি মহাজোট আমলে সীমা অতিক্রম করায় প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পদ ছেড়ে দেন। কিন্তু এরপরও ছাত্রলীগ প্রধানমন্ত্রীর ওই হুমকি আমলে নেয়নি। সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর প্রথম তিন মাসে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে কিছু পত্রিকায় প্রকাশিত ছাত্রলীগের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সংখ্যা পাওয়া যায় যেখানে ৮৮টি, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সাংগঠনিক পদ ছেড়ে দেয়ার পরবর্তী তিন মাসে একই পদ্ধতিতে সংগৃহীত ছাত্রলীগের ১৩৪টি নেতিবাচক কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে যে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সম্মানিত জননেত্রীর হুশিয়ারি উপেক্ষা করে তাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড অব্যাহতভাবে প্রসারিত করেন।
ছাত্র নেতাকর্মীদের মধ্যে আগে বিপদাপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রবণতা ছিল। শিক্ষাঙ্গন বা জাতির স্বার্থে প্রয়োজনে তারা রাজপথে আন্দোলনে নামতেন। কিন্তু এখন তাদের সে সময় নেই। তাদের বৈষয়িক ব্যস্ততা এতই বেড়েছে যে গরিব মানুষ শৈত্যপ্রবাহে মরণাপন্ন হলেও তারা শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময় পান না। শিক্ষানীতির মতো শিক্ষাঙ্গনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বিষয়ে সেমিনার করে বড় ছাত্র সংগঠনগুলো প্রতিক্রিয়া জানানোর অবসর পায় না। বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া, গত ২০ বছরে ছাত্রদের শিক্ষাঙ্গনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট উল্লেখযোগ্য কোনো আন্দোলন সংগ্রাম করতে দেখা যায়নি। তারা এখন নানা কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। ক্ষুদ্র পরিসরে সে কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি দেয়া সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, অতীত সরকারগুলোর ছাত্র সংগঠনও সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করে নিজেদের গায়ে কালো দাগ লাগায়। তবে মহাজোট সরকার আমলে ছাত্রলীগের গায়ে ওই কালো দাগগুলো ছাড়াও দুটি চকচকে নতুন কালো দাগ লাগে। নিম্নে সে দুটি কালো দাগ উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করা হলো।
এক : ইডেন কলঙ্ক
রাজধানীর ইডেন কলেজে ২০১০-এর মার্চে ছাত্রলীগ নেত্রীদের ভর্তিবাণিজ্যকেন্দ্রিক সংঘর্ষে তাদের অনৈতিক অপরাধমূলক কর্মতত্পরতার খবর প্রকাশিত হয়ে জাতিকে লজ্জায় ফেললেও আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ রহস্যজনক কারণে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। ইডেনে ছাত্রলীগের ১২ মার্চের সংঘর্ষের পর ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের নেতারা পরস্পরকে অনৈতিক কাজে জড়িত বলে অভিযোগ করেন। ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করানোর অভিযোগ পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট আকারে প্রকাশিত হয়। এ ধরনের একটি রিপোর্টে বলা হয়, ‘বিবদমান উভয় গ্রুপ পরস্পরের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করে আরও বলেছে, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রীদের জোর করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো ছাড়াও গাউছিয়া মার্কেটের হোটেল ও আজিমপুরের ফ্ল্যাটসহ রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে টার্গেট থাকে সংগঠনের জুনিয়র কর্মী এবং প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের আগত ছাত্রীরা। কেউ নেত্রীদের প্রস্তাবে রাজি না হলে সংশ্লিষ্ট ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়’ (যুগান্তর ১৩.৩.১০)। এ অপকর্মের সত্যতা ছাত্রীদের বক্তব্যেও স্পষ্ট হয়। অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের জনৈক ছাত্রী বলেন, ‘আমার চৌদ্দগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে। আমি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কথামতো না চলায় আমাকে শিবির বানিয়ে হল থেকে বের করে দিয়েছে। আমাকে সব ধরনের অফার করা হয়েছিল। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক টাকার বিনিময়ে নবম শ্রেণীর মেয়েদেরও হলে রেখে তাদের দিয়ে দেহব্যবসা করাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে শিবির বলে হল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে’ (আমার দেশ, ১৩.৩.১০)।
ইডেন কলঙ্কের লজ্জা শিক্ষাঙ্গনসহ রাজনৈতিক অঙ্গন এবং সুশীল সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। বলিষ্ঠ সাংবাদিক আতাউস সামাদ ‘এ কলঙ্ক বড়ই যাতনাময়’ শিরোনামে প্রবন্ধ লিখে এবং সাবেক ছাত্রনেতা হায়দার আকবর খান রনো তাঁর লেখায় এ ঘটনাকে ‘এর চেয়ে লজ্জার, এর চেয়ে ঘৃণার কথা আর কী হতে পারে?’ — বলে আলোচ্য কলঙ্কের লজ্জা থেকে পরিত্রাণের ব্যর্থ চেষ্টা করেন। সম্মানিত বিরোধীদলীয় নেত্রী যুগপত্ সংসদের ভেতরে এবং বাইরে আলোচ্য অনৈতিক কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন। চট্টগ্রামে লালদীঘি ময়দানে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশে বেগম জিয়া বলেন, ‘ছাত্রলীগের ছেলেরা মা-বোনদের ওপর অত্যাচার করছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেঞ্চুরি উত্সব করেছে। ইডেন মহিলা কলেজে তাদের মেয়েরা ভর্তিবাণিজ্য করছে, আবার মন্ত্রী-এমপি ও ব্যবসায়ীদের মনোরঞ্জনেও পাঠাচ্ছে মেয়েদের।’ এ কলঙ্ক এমন স্পষ্টভাবে উন্মোচিত হওয়ার পর ইডেন ছাত্রীদের সামাজিক মর্যাদা হ্রাস পায়। এক মাসের মধ্যে ১৫৯ ছাত্রী ভর্তি বাতিলের আবেদন করেন এবং কিছুসংখ্যক উদ্বিগ্ন অভিভাবক তাদের মেয়েদের হল থেকে বাড়ি নিয়ে যান। এতবড় অভিযোগ এমন নগ্নভাবে উন্মোচিত হলেও সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বা ইডেন কলেজ কর্তৃপক্ষ—কেউই এ বিষয়টি তদন্ত করেছে বলে জানা যায় না। এ কারণে নেত্রীদের কলঙ্ক মোচন না হওয়ায় ইডেন কলঙ্ক ছাত্রলীগের শরীরে কালো দাগ হয়ে রয়ে যায়।
দুই : অভিনব পরীক্ষা
মাননীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ২০১০-এর এপ্রিলে পাবনায় ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের প্রাক্কালে নির্বাচন পদপ্রার্থী ছাত্র নেতাকর্মীদের রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করান। প্রার্থীদের মধ্যে যাতে মাদকাসক্ত না থাকেন সেজন্য এ রক্ত পরীক্ষার ‘শুদ্ধি অভিযান’কে স্থানীয় নেতারা অভিনন্দন জানান। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চারিত্রিক অধঃপতন কোন পর্যায়ে গেলে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে এহেন উদ্যোগ নেয়া সম্ভব তা অনুধাবনযোগ্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রধান সমস্যাগুলো কি রক্ত পরীক্ষা করে নির্ণয় করা সম্ভব? তাদের প্রধান সমস্যা কি মাদকাসক্তি?
সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে মাদকাসক্তির অভিযোগ প্রকাশিত হয়নি। একথা বলার অর্থ এ নয় যে, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মাদকমুক্ত। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে নৈমিত্তিকভাবে উত্থাপিত অভিযোগগুলো ছিল সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, ভর্তিবাণিজ্য, সিটবাণিজ্য, অনৈতিক কাজ, অন্তঃকোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকেন্দ্রিক সংঘর্ষ প্রভৃতি। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী মহোদয় এসব অভিযোগের প্রতি নজর না দিয়ে মাদকের দিকে গেলেন কেন? তিনি কি উল্লিখিত অভিযোগগুলো থেকে ছাত্রলীগ নেতৃত্বকে মুক্ত করতে চান না? ছাত্রলীগ নেতৃত্বকে মাদকমুক্ত করার প্রচেষ্টা অবশ্যই ভালো কাজ। তবে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগগুলো থেকে এ নেতৃত্বকে মুক্ত করা কি অধিক জরুরি ছিল না? কিন্তু দুঃখের বিষয়, প্রতিমন্ত্রী মহোদয় উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেননি। ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি করেন কিনা, ভর্তিবাণিজ্য করেন কিনা, খুন-খারাবি বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত কিনা, সেসব বিষয় যে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব নয়, তা কি মন্ত্রী মহোদয় জানেন না? অবশ্য তিনি যদি রক্ত পরীক্ষা করিয়ে ছাত্রনেতাদের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ভর্তিবাণিজ্য বা অনৈতিক কাজের সম্পৃক্ততা নির্ণয় করাতে পারতেন তাহলে নিঃসন্দেহে বিষয়টি চিকিত্সাশাস্ত্রে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়ে এক্ষেত্রে প্রতিমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক পদক পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করত।
প্রতিমন্ত্রী যদি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রকৃতই স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে চাইতেন, তাহলে এরা যাতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না করতে পারে সেজন্য এদের বিরুদ্ধে তিনি প্রথমেই অস্ত্র উদ্ধার অভিযান করাতেন। চাঁদাবাজ নেতাদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা করাতেন। নেতাদের অবৈধ সম্পদ আছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য তাদের ব্যাংক হিসাব পরীক্ষা করাতেন আর ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের সম্পদের হিসাব গ্রহণ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করাতেন। অবশ্য প্রতিমন্ত্রী তা করান কীভাবে? কারণ, যেখানে তাঁর দল নির্বাচনি ইশতেহারে মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের হিসাব গ্রহণ ও প্রকাশের ওয়াদা করেও বছর দেড়েক গড়িমসির পর সে প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে, সেখানে অপ্রতিশ্রুত ছাত্রলীগ নেতাদের সম্পদের হিসাব গ্রহণ ও প্রকাশ করা মানানসই হয় না। বলা যায়, মন্ত্রী মহোদয়ের ছাত্রনেতাদের রক্ত পরীক্ষার মধ্যে ছাত্রলীগকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা যতটা ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল তাদের বড় অপকর্মগুলো আড়াল করার চাতুরি। এ অভিনব রক্ত পরীক্ষার ঘটনা ছাত্রলীগের শরীরে নতুন কালো দাগ এঁকে দেয়।
শরীরের দাগ মোচনের ওষুধ আছে। ফুটপাতের ওষুধ বিক্রেতাদের কাছেও দাগ নিবারণের মলম পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহার করে মানব শরীরের কালো দাগ মোচন করা সম্ভব। কিন্তু অপকর্মের কারণে অঙ্কিত সংগঠনের কালো দাগ মোচনের ওষুধ বাজারে পাওয়া যায় না। এ দাগ মোচনের একটিমাত্র উপায় আছে। আর তা হলো, অর্জন ও ভোগের রাজনীতি পরিহার করে পরোপকার ও ত্যাগের রাজনীতিতে ফিরে অব্যাহতভাবে ভালো কাজ করার মধ্য দিয়ে দুষ্কর্মের দুর্নাম মুছে দিয়ে এ দাগ নিশ্চিহ্ন করা। দেশবাসী ধৈর্য ধরে দেখতে চায়, ছাত্রলীগ নেতৃত্ব উল্লিখিত প্রক্রিয়ায় এর শরীরের নতুন কালো দাগগুলো মোচন করতে পারে কিনা।
লেখক : অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
akhtermy@gmail.com
দিনবদলের স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এলেও মহাজোট সরকার আমলে ছাত্ররাজনীতি চলমান দু্ষ্টচক্র থেকে বের হতে পারেনি। এ সময়ে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের অধিকতর অবনতি হয়। চলমান চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির সঙ্গে নতুন উপসর্গ হিসেবে যুক্ত হয় বর্ধিত হারে ভর্তিবাণিজ্য। ছাত্ররাজনীতিকে ছাত্রনেতারা যেন ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করেন। ছোটখাটো ব্যবসা বা চাকরি করার চেয়ে ছাত্ররাজনীতি করাকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান মনে করে সম্প্রতি কতিপয় সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমান পেশা ছেড়ে দিয়ে দ্বিতীয় এমএ বা এমফিল ডিগ্রি করার নামে নতুনভাবে ছাত্রত্ব অর্জন করে ছাত্ররাজনীতিতে ফিরে আসেন।
সরকারি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্র সংগঠনের বাড়াবাড়ি শিক্ষাঙ্গনে পরিচিত বিষয়। এ বাড়াবাড়ি মহাজোট আমলে সীমা অতিক্রম করায় প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পদ ছেড়ে দেন। কিন্তু এরপরও ছাত্রলীগ প্রধানমন্ত্রীর ওই হুমকি আমলে নেয়নি। সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর প্রথম তিন মাসে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে কিছু পত্রিকায় প্রকাশিত ছাত্রলীগের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সংখ্যা পাওয়া যায় যেখানে ৮৮টি, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সাংগঠনিক পদ ছেড়ে দেয়ার পরবর্তী তিন মাসে একই পদ্ধতিতে সংগৃহীত ছাত্রলীগের ১৩৪টি নেতিবাচক কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে যে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সম্মানিত জননেত্রীর হুশিয়ারি উপেক্ষা করে তাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড অব্যাহতভাবে প্রসারিত করেন।
ছাত্র নেতাকর্মীদের মধ্যে আগে বিপদাপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রবণতা ছিল। শিক্ষাঙ্গন বা জাতির স্বার্থে প্রয়োজনে তারা রাজপথে আন্দোলনে নামতেন। কিন্তু এখন তাদের সে সময় নেই। তাদের বৈষয়িক ব্যস্ততা এতই বেড়েছে যে গরিব মানুষ শৈত্যপ্রবাহে মরণাপন্ন হলেও তারা শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময় পান না। শিক্ষানীতির মতো শিক্ষাঙ্গনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বিষয়ে সেমিনার করে বড় ছাত্র সংগঠনগুলো প্রতিক্রিয়া জানানোর অবসর পায় না। বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া, গত ২০ বছরে ছাত্রদের শিক্ষাঙ্গনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট উল্লেখযোগ্য কোনো আন্দোলন সংগ্রাম করতে দেখা যায়নি। তারা এখন নানা কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। ক্ষুদ্র পরিসরে সে কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি দেয়া সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, অতীত সরকারগুলোর ছাত্র সংগঠনও সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করে নিজেদের গায়ে কালো দাগ লাগায়। তবে মহাজোট সরকার আমলে ছাত্রলীগের গায়ে ওই কালো দাগগুলো ছাড়াও দুটি চকচকে নতুন কালো দাগ লাগে। নিম্নে সে দুটি কালো দাগ উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করা হলো।
এক : ইডেন কলঙ্ক
রাজধানীর ইডেন কলেজে ২০১০-এর মার্চে ছাত্রলীগ নেত্রীদের ভর্তিবাণিজ্যকেন্দ্রিক সংঘর্ষে তাদের অনৈতিক অপরাধমূলক কর্মতত্পরতার খবর প্রকাশিত হয়ে জাতিকে লজ্জায় ফেললেও আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ রহস্যজনক কারণে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। ইডেনে ছাত্রলীগের ১২ মার্চের সংঘর্ষের পর ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের নেতারা পরস্পরকে অনৈতিক কাজে জড়িত বলে অভিযোগ করেন। ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করানোর অভিযোগ পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট আকারে প্রকাশিত হয়। এ ধরনের একটি রিপোর্টে বলা হয়, ‘বিবদমান উভয় গ্রুপ পরস্পরের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করে আরও বলেছে, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রীদের জোর করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো ছাড়াও গাউছিয়া মার্কেটের হোটেল ও আজিমপুরের ফ্ল্যাটসহ রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে টার্গেট থাকে সংগঠনের জুনিয়র কর্মী এবং প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের আগত ছাত্রীরা। কেউ নেত্রীদের প্রস্তাবে রাজি না হলে সংশ্লিষ্ট ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়’ (যুগান্তর ১৩.৩.১০)। এ অপকর্মের সত্যতা ছাত্রীদের বক্তব্যেও স্পষ্ট হয়। অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের জনৈক ছাত্রী বলেন, ‘আমার চৌদ্দগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে। আমি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কথামতো না চলায় আমাকে শিবির বানিয়ে হল থেকে বের করে দিয়েছে। আমাকে সব ধরনের অফার করা হয়েছিল। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক টাকার বিনিময়ে নবম শ্রেণীর মেয়েদেরও হলে রেখে তাদের দিয়ে দেহব্যবসা করাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে শিবির বলে হল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে’ (আমার দেশ, ১৩.৩.১০)।
ইডেন কলঙ্কের লজ্জা শিক্ষাঙ্গনসহ রাজনৈতিক অঙ্গন এবং সুশীল সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। বলিষ্ঠ সাংবাদিক আতাউস সামাদ ‘এ কলঙ্ক বড়ই যাতনাময়’ শিরোনামে প্রবন্ধ লিখে এবং সাবেক ছাত্রনেতা হায়দার আকবর খান রনো তাঁর লেখায় এ ঘটনাকে ‘এর চেয়ে লজ্জার, এর চেয়ে ঘৃণার কথা আর কী হতে পারে?’ — বলে আলোচ্য কলঙ্কের লজ্জা থেকে পরিত্রাণের ব্যর্থ চেষ্টা করেন। সম্মানিত বিরোধীদলীয় নেত্রী যুগপত্ সংসদের ভেতরে এবং বাইরে আলোচ্য অনৈতিক কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন। চট্টগ্রামে লালদীঘি ময়দানে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশে বেগম জিয়া বলেন, ‘ছাত্রলীগের ছেলেরা মা-বোনদের ওপর অত্যাচার করছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেঞ্চুরি উত্সব করেছে। ইডেন মহিলা কলেজে তাদের মেয়েরা ভর্তিবাণিজ্য করছে, আবার মন্ত্রী-এমপি ও ব্যবসায়ীদের মনোরঞ্জনেও পাঠাচ্ছে মেয়েদের।’ এ কলঙ্ক এমন স্পষ্টভাবে উন্মোচিত হওয়ার পর ইডেন ছাত্রীদের সামাজিক মর্যাদা হ্রাস পায়। এক মাসের মধ্যে ১৫৯ ছাত্রী ভর্তি বাতিলের আবেদন করেন এবং কিছুসংখ্যক উদ্বিগ্ন অভিভাবক তাদের মেয়েদের হল থেকে বাড়ি নিয়ে যান। এতবড় অভিযোগ এমন নগ্নভাবে উন্মোচিত হলেও সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বা ইডেন কলেজ কর্তৃপক্ষ—কেউই এ বিষয়টি তদন্ত করেছে বলে জানা যায় না। এ কারণে নেত্রীদের কলঙ্ক মোচন না হওয়ায় ইডেন কলঙ্ক ছাত্রলীগের শরীরে কালো দাগ হয়ে রয়ে যায়।
দুই : অভিনব পরীক্ষা
মাননীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ২০১০-এর এপ্রিলে পাবনায় ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের প্রাক্কালে নির্বাচন পদপ্রার্থী ছাত্র নেতাকর্মীদের রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করান। প্রার্থীদের মধ্যে যাতে মাদকাসক্ত না থাকেন সেজন্য এ রক্ত পরীক্ষার ‘শুদ্ধি অভিযান’কে স্থানীয় নেতারা অভিনন্দন জানান। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চারিত্রিক অধঃপতন কোন পর্যায়ে গেলে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে এহেন উদ্যোগ নেয়া সম্ভব তা অনুধাবনযোগ্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রধান সমস্যাগুলো কি রক্ত পরীক্ষা করে নির্ণয় করা সম্ভব? তাদের প্রধান সমস্যা কি মাদকাসক্তি?
সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে মাদকাসক্তির অভিযোগ প্রকাশিত হয়নি। একথা বলার অর্থ এ নয় যে, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মাদকমুক্ত। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে নৈমিত্তিকভাবে উত্থাপিত অভিযোগগুলো ছিল সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, ভর্তিবাণিজ্য, সিটবাণিজ্য, অনৈতিক কাজ, অন্তঃকোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকেন্দ্রিক সংঘর্ষ প্রভৃতি। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী মহোদয় এসব অভিযোগের প্রতি নজর না দিয়ে মাদকের দিকে গেলেন কেন? তিনি কি উল্লিখিত অভিযোগগুলো থেকে ছাত্রলীগ নেতৃত্বকে মুক্ত করতে চান না? ছাত্রলীগ নেতৃত্বকে মাদকমুক্ত করার প্রচেষ্টা অবশ্যই ভালো কাজ। তবে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগগুলো থেকে এ নেতৃত্বকে মুক্ত করা কি অধিক জরুরি ছিল না? কিন্তু দুঃখের বিষয়, প্রতিমন্ত্রী মহোদয় উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেননি। ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি করেন কিনা, ভর্তিবাণিজ্য করেন কিনা, খুন-খারাবি বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত কিনা, সেসব বিষয় যে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব নয়, তা কি মন্ত্রী মহোদয় জানেন না? অবশ্য তিনি যদি রক্ত পরীক্ষা করিয়ে ছাত্রনেতাদের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ভর্তিবাণিজ্য বা অনৈতিক কাজের সম্পৃক্ততা নির্ণয় করাতে পারতেন তাহলে নিঃসন্দেহে বিষয়টি চিকিত্সাশাস্ত্রে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়ে এক্ষেত্রে প্রতিমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক পদক পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করত।
প্রতিমন্ত্রী যদি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রকৃতই স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে চাইতেন, তাহলে এরা যাতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না করতে পারে সেজন্য এদের বিরুদ্ধে তিনি প্রথমেই অস্ত্র উদ্ধার অভিযান করাতেন। চাঁদাবাজ নেতাদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা করাতেন। নেতাদের অবৈধ সম্পদ আছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য তাদের ব্যাংক হিসাব পরীক্ষা করাতেন আর ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের সম্পদের হিসাব গ্রহণ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করাতেন। অবশ্য প্রতিমন্ত্রী তা করান কীভাবে? কারণ, যেখানে তাঁর দল নির্বাচনি ইশতেহারে মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের হিসাব গ্রহণ ও প্রকাশের ওয়াদা করেও বছর দেড়েক গড়িমসির পর সে প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে, সেখানে অপ্রতিশ্রুত ছাত্রলীগ নেতাদের সম্পদের হিসাব গ্রহণ ও প্রকাশ করা মানানসই হয় না। বলা যায়, মন্ত্রী মহোদয়ের ছাত্রনেতাদের রক্ত পরীক্ষার মধ্যে ছাত্রলীগকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা যতটা ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল তাদের বড় অপকর্মগুলো আড়াল করার চাতুরি। এ অভিনব রক্ত পরীক্ষার ঘটনা ছাত্রলীগের শরীরে নতুন কালো দাগ এঁকে দেয়।
শরীরের দাগ মোচনের ওষুধ আছে। ফুটপাতের ওষুধ বিক্রেতাদের কাছেও দাগ নিবারণের মলম পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহার করে মানব শরীরের কালো দাগ মোচন করা সম্ভব। কিন্তু অপকর্মের কারণে অঙ্কিত সংগঠনের কালো দাগ মোচনের ওষুধ বাজারে পাওয়া যায় না। এ দাগ মোচনের একটিমাত্র উপায় আছে। আর তা হলো, অর্জন ও ভোগের রাজনীতি পরিহার করে পরোপকার ও ত্যাগের রাজনীতিতে ফিরে অব্যাহতভাবে ভালো কাজ করার মধ্য দিয়ে দুষ্কর্মের দুর্নাম মুছে দিয়ে এ দাগ নিশ্চিহ্ন করা। দেশবাসী ধৈর্য ধরে দেখতে চায়, ছাত্রলীগ নেতৃত্ব উল্লিখিত প্রক্রিয়ায় এর শরীরের নতুন কালো দাগগুলো মোচন করতে পারে কিনা।
লেখক : অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
akhtermy@gmail.com
No comments:
Post a Comment